একের পর এক ঢেউ আছড়ে পড়ছে বালুময় ঢালু তীরে। পাশেই ঘাস বন, হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে সবুজ ঘাস। এ যেন এক সমুদ্র সৈকত। তাই ঈদের আনন্দে প্রকৃতির এমন আয়োজন উপভোগ করতে মুন্সিগঞ্জের সীমান্ত সংলগ্ন চরকিশোরগঞ্জ গজারিয়াঘাট মেঘনা নদীর তীরে প্রতিদিন ছুটছেন হাজারও মানুষ। ঈদ উদযাপনে বিনোদনপ্রেমীদের কাছে অন্যতম স্পটে পরিণত হয়ে উঠেছে স্থানটি।
শনিবার (১৫ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, চরকিশোরগঞ্জে মেঘনার তীরের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মানুষ। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, আবার কেউ বন্ধুদের সঙ্গে দল বেধে। কেউ সেলফি আবার কেউ গা ভাসাচ্ছেন মেঘনার জলরাশিতে। ট্রলারযোগে গান বাজিয়ে তীর ঘেসে এদিক-সেদিক ছুটছে কিশোর-যুবারা। সবাই ঈদ আনন্দে উৎফুল্ল। নদী তীরের নয়নাভিরাম পরিবেশ আর মানুষের মিলন মেলায় যেন আরেকটি মিনি কক্সবাজারে রূপ নিয়েছে মেঘনার তীর।তবে করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ঘুরতে আসা দর্শণার্থীদের মাঝে উদাসীনতা দেখা গেছে।
ঘুরতে আসা কলেজ ছাত্র শান্ত বলেন, এতো বাতাস- মন জুড়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো বাতাস।বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি ভালো লাগছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনা-লকডাউন কোথাও তো যাওয়ার জায়গা নেই। এ জায়গাটি অপূর্ব। গত কয়েকবছর ধরে এখানে মানুষ আসতে শুরু করেছে। বন্ধুরা সবাই মিলে গোসল করলাম।
ব্যবসায়ী রিয়াজ হোসেন বলেন, মুন্সিগঞ্জে বিনোদন কেন্দ্রের অভাব। তার উপরে করোনা, মানুষের যাওয়ার জায়গা নেই। এ জায়গাটি সুন্দর। নদীর পাড়ের স্নিগ্ধ পরিবেশ, শীতল বাতাস সবারই ভালো লাগবে।
শ্রাবণী আক্তার বলেন, করোনা তো বছর জুড়েই চলছে। কতদিন ঘরে থাকবো, ঈদের মধ্যে ঘুরতে বের হয়েছি। আর আমি ভ্যাকসিন নিয়েছি, আশাকরি সমস্যা হবে না।
মিল্লাদ হোসেন জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তো কত কাজই করা যায়। সবাই যদি অন্তত মাস্ক ব্যবহার করে তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা এড়ানো যাবে।
ইসরাত জাহান বলেন, প্রতি ঈদে সবাই অনেক দূরে ঘুরতে যায়। সরকার দৃষ্টি দিলে ভবিষৎতে এটিও গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন কেন্দ্র হতে পারে।
জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ সদরের প্রধান বাজারের থেকে চিরকিশোরগঞ্জের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। ২৫ টাকা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা অথবা ১০০ টাকায় পুরো গাড়ি রিজার্ভ করে যাওয়া যায়। সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট।
চিরকিশোরগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা ফজল বেপারী বলেন, এলাকটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে পড়লেও মুন্সিগঞ্জ সদরের সঙ্গেই মূলত প্রধান যোগাযাগ। আমাদের পাড়ের বিপরীত পাড় আবার গজারিয়া, সেটিও মুন্সিগঞ্জে।
তিনি আরও বলেন, নদীর পাড়টি দেখার মত সুন্দর। বাতাস-ঢেউ সব সময় থাকে। শহর থেকে অদূরে এবং কোলাহলমুক্ত। যে কোনো উৎসবে হাজারও মানুষ এখানে আসে। দর্শণার্থীর কথা মাথায় রেখে তিনটি রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। সেখানেও মানুষের ভিড় থাকে।