পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় দুবাইয়ে পলাতক স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানসহ ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব সাত বছর আগের এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত অপর আসামিরা হলেন- আরাভ খানের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া (২১), মামুন ইমরানের বন্ধু রহমাত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাছান ওরফে দিলু শেখ (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩)।
দণ্ডিতদের মধ্যে আরাভ খান এবং তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া পলাতক। বাকি ৬ আসামির মধ্যে রহমাত উল্লাহ, সারোয়ার হোসেন জামিনে থেকে আদালতে হাজির হন। অপর চার আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
পরে ৬ আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আরাভ খান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান ২০১৮ সালের ৮ জুলাই বন্ধু রহমত উল্লাহর সঙ্গে বনানীর একটি বাসায় গিয়ে খুন হন। পরদিন তার লাশ বস্তায় ভরে উলুখোলার জঙ্গলে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পোড়ানো হয় বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।
২০১৮ সালের ৯ জুলাই গাজীপুরের জঙ্গল থেকে মামুনের লাশ উদ্ধারের পর তার ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বনানী থানায় হত্যা মামলাটি করেন।
২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, রবিউল ইসলামের (আরাভ খান) নেতৃত্বে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করত একটি চক্র। তাদের লক্ষ্য ছিল রহমত উল্লাহকে আটকে ‘অশালীন’ ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আদায় করা। সেজন্য ওই চক্র জন্মদিনের নাটক সাজিয়ে রহমতকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল বনানীর ওই বাসায়। বন্ধু রহমতের সঙ্গে সেখানে গিয়ে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা মামুন।
ওই সময় মামলাটির তদন্তে যুক্ত ছিলেন গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহীদুর রহমান। তিনি জানান, রবিউলসহ ১০ জনকে আসামি করেই পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয় আদালতে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ হয়।
পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলায় আসামি রবিউলই যে আরাভ খান নামে দুবাইয়ে আছেন, তা ২০২৩ সালে প্রকাশ পায় সেখানে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি গয়নার দোকান উদ্বোধনকালে।
সেই অনুষ্ঠানে জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ বিনোদন জগতের তারকারা ছুটে গেলে আরাভের চেহারা প্রকাশ্যে আসে।
এরপর পুলিশের তরফে বলা হয়, আরাভ খানেই যে রবিউল, তারা তা নিশ্চিত হয়েছেন।
আরও জানা যায়, মামলার পর রবিউল ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট করিয়ে দুবাইয়ে পাড়ি জমান।
আরাভকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে ইন্টারপোলের রেড নোটিসও জারি করে বাংলাদেশের পুলিশ। তবে তাকে ফেরানো সম্ভব না হওয়ায় তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলতে থাকে।
এ মামলায় অভিযোগপত্রের ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালতে ২৬ জন সাক্ষ্য দেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ৫ মার্চ তারিখ রাখেন। এরপর তিন দফা পিছিয়ে বৃহস্পতিবার সেই মামলার রায় হল।
এর আগে ২০২৩ সালের ৯ মে এক অস্ত্র মামলায় আরাভ খানকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকা মহানগরের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
সেই মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি রবিউল ওরফে আরাভ তার শ্বশুর সেকেন্দার আলীকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে ঢাকার মগবাজারের বাসায় যান। পরে একটি গুলিভর্তি রিভলবারসহ বাসার সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ জামিন নিয়ে পলাতক হন রবিউল। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করে আদালত।
নদীবন্দর/এএস