মরণব্যাধি ক্যান্সার শরীরের এক কোষ থেকে অন্য কোষে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার সনাক্ত করা না গেলে তা মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়। শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধলে নারী-পুরুষ সবার মধ্যেই সাধারণ কিছু উপসর্গ ও পরিবর্তন টের পাওয়া যায়।
অনেকেই সাধারণ ভেবে এসব লক্ষণ এড়িয়ে যান। তবে মনে রাখবেন, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সারের বিভিন্ন লক্ষণ সাধারণভাবেই প্রকাশ পায়। তাই কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলো এড়িয়ে যাবেন না।
আপনার বয়স বা স্বাস্থ্য যা-ই হোক না কেন, ক্যান্সারের সম্ভাব্য লক্ষণগুলো সবারই জেনে রাখা উচিত। তাহলে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনে আপনি সচেতন থাকতে পারেন এবং দ্রুত ক্যান্সার সনাক্ত করা যেতে পারে।
বেশিরভাগ ক্যান্সারই শরীরের বিভিন্ন স্থানের ছোট-বড় টিউমার থেকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব।
কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো খুবই সাধারণ অসুস্থতার লক্ষণ, তাই অনেকেই প্রথমদিকে টের পান না যে এসব লক্ষণই মারাত্মক হতে চলেছে। তাই একই শারীরিক সমস্যা দীর্ঘদিন ভুগলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিত।
জেনে নিন সাধারণ কিছু ক্যান্সারের লক্ষণ, যেগুলো নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা দিতে পারে।
১. ব্যথা: হাড়ের ক্যান্সার হলে প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে জয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। মস্তিষ্কে টিউমার হলে মাথা ব্যাথার কারণ হয়, যা কয়েক দিন ধরে স্থায়ী হতে থাকে এবং চিকিৎসার মাধ্যমেও মাথাব্যথা ভালো হয় না। তাই একই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পালাক্রমে ব্যথা অনুভব করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২. ওজন কমানো: ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেকেরই প্রাথমিক অবস্থায় ওজন কমতে শুরু করে। তাই কায়িক পরিশ্রম বা শরীরচর্চা কিংবা ডায়েট না করেও যদি আপনার ক্রমাগত ওজন কমতে থাকে; তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. ক্লান্তি: বিভিন্ন কাজের পর ক্লান্তি আসতেই পারে। তবে কাজ না করেও যদি সবসময় ক্লান্তি অনুভব করেন; তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কোলন বা পেটের ক্যান্সার থেকে রক্তক্ষয় হতে পারে। এর ফলে শরীর আরও দুর্বল হয়ে যায়।
৪. জ্বর: বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে জ্বর দেখা দেয়। ৩ দিনের বেশি জ্বর স্থায়ী হলে ডাক্তারে পরামর্শ নিন। লিম্ফোমার মতো কিছু রক্তের ক্যান্সারের কারণে কয়েক দিনের বা সপ্তাহ পর্যন্ত জ্বর থাকতে পারে।
৫. বিবর্ণ ত্বক: চেহারা এমনকি ত্বকেও ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পায়। বিশেষ করে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্তদের শরীরে অস্বাভাবিকতা বা নতুন তিল, মোলস বা বাদামি, কালচে স্পট দেখা দিতে পারে। হলুদ বা লাল স্পটসহ চুলকানি দেখা দিলে বা ফুসকুড়ি থাকলে তা লিভার, ডিম্বাশয় বা কিডনি ক্যান্সার বা লিম্ফোমার লক্ষণ হতে পারে।
৬. মুখে দীর্ঘদিন ধরে ঘা থাকলে তা ওরাল ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। ধূমপান করা, তামাক চিবানো বা প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল পান করলেও ওরাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
৭. কাশি: ফুসফুস ক্যান্সারের একটি সাধারণ লক্ষণ হলো কাশি। ভয়েস বক্স (ল্যারিক্স) বা থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যান্সারেরও লক্ষণ হতে পারে দীর্ঘদিন ধরে কাশি থাকা।
৮. অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ: পায়খানার সঙ্গে নিয়মিত রক্ত পড়ার কারণ হতে পারে কোলন বা মলদ্বার ক্যান্সারের লক্ষণ। মূত্রনালীতে টিউমার হলে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়তে পারে।
৯. রক্তশূন্যতা: যখন আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্তকণিকা থাকে না; রক্তশূন্যতা তখনই হয়। অস্থি মজ্জাতে তৈরি হয় রক্তকণিকা। লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা এবং একাধিক মেলোমা এর মতো ক্যান্সারগুলো আপনার মজ্জার ক্ষতি করে।
১০. পুরুষদের মধ্যে সর্বাধিক সাধারণ ক্যান্সার হলো প্রোস্টেট, ফুসফুস এবং কলোরেক্টাল। প্রস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রস্রাব করতে অসুবিধা হতে পারে। নিয়মিত যদি প্রস্রাবে অসুবিধা কিংবা মূত্রের সঙ্গে রক্ত দেখা দেওয়া এবং ব্যথা অনুভব করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এ ছাড়াও অণ্ডকোষে ব্যথা হওয়ার লক্ষণ হতে পারে টেস্টিকুলার ক্যান্সার।
১১. নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন স্তন, ফুসফুস এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে। এ ছাড়াও জরায়ু, এন্ডোমেট্রিয়াম, যোনি বা ভলভা ক্যান্সারেও আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যোনি দিয়ে রক্তপাত বা স্রাব বের হওয়া, ক্ষুধামন্দা, পেটে ব্যথা বা ফোলাভাব, স্তনের পরিবর্তন বা ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র: ওয়েব এমডি
নদী বন্দর / এমকে