শ্রীলঙ্কায় লকডাউনের বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সংখ্যালঘু মুসলিম নাগরিকদের রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসিয়ে অপমান করার ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে এক কর্মকর্তা ও জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও সেনাবাহিনী রোববার (২০ জুন) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
আল-জাজিরা জানায়, রোববার এরাভুর শহরের হোটেলে খাবার কিনতে যাচ্ছিলেন মুসলিম নাগরিকরা। সেসময় শসস্ত্র সেনা সদস্যরা করোনাবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের হাত উপরে তুলে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রেখে শাস্তি দেন।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন। তারা জানান, এ ধরনের সাজা দেয়ার কোনো ক্ষমতা সেনাবাহিনীর নেই। এ ঘটনাকে অবজ্ঞাপূর্ণ এবং অপমানজনক বলে জানান তারা।
পরে এ বিষয়ে বিবৃতি দেয় সেনাবাহিনী। বিবৃতিতে তারা জানায়, এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর মিলিটারি পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে এক কর্মকর্তাকে অপসারণ ও অভিযুক্ত সেনা সদস্যদের শহর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নিজেদের বিরুদ্ধে সপ্রণোদিত হয়ে সেনাবাহিনীর এ ধরনের তদন্ত দেশটিতে বিরল দৃষ্টান্ত।
এদিকে করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় শ্রীলঙ্কায় মাসব্যাপী কঠোর লকডাউন চলমান। এপ্রিলের মাঝামাঝিতে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর সেখানে মৃত্যু প্রায় চারগুণ বেড়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৫৮১ জনের। এ অবস্থায় লকডাউনের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশকে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিলদের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে চলা যুদ্ধে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও রয়েছে। যদিও ২০০৯ সালে সেই যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে সেনাবাহিনী প্রায় ৪০ হাজার বেসামরিক মানুষ হত্যা করেছে।
১৯৭২ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত চলমান যুদ্ধে সেনাবাহিনী এক লাখের বেশি মানুষ হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে দেশটির প্রতিটি সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
নদী বন্দর / জিকে