‘রাতের ভোটের কারিগর’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে তার উত্তরার বাসা থেকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীসহ বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে তাকে পুলিশ গ্রেফতার দেখিয়েছে।
রোববার (২২ জুন) সন্ধ্যায় নুরুল হুদাকে জনতার আটকের সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, সাবেক সিইসি নুরুল হুদা একটি সাদা টিশার্ট ও লুঙ্গি পরে চেয়ারে আছেন। তার চারপাশে জনতার ভিড়। জনতার মাঝ থেকে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয় এ সময়।
লাইভে দেখা যায়, পরে নুরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন একজন। তার গেঞ্জির কলার ধরে রেখে বক্তব্য দিতে দেখা যায় ওই ব্যক্তিকে। এসময় ওই ব্যক্তির পাশে পুলিশের পোশাক পরা আরও একজনকেও দেখা যায়।
উত্তরা পশ্চিম থানার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘পুলিশ যাওয়ার আগেই ‘মব’ তাকে যথেষ্ট হেনস্তা করে ফ্ল্যাট থেকে নামিয়ে আনে। তাকে ডিম ছুড়ে মারা হয়েছিল। তারই ভবন থেকে দুটি জুতা নিয়ে রশির সঙ্গে বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে দেয় ওই ব্যক্তিরা।’
সে সময় বাসার দরজার সামনে স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার নাম নিয়ে স্লোগান দেন উপস্থিত জনতা।
ভিডিওতে দেখা যায় সাবেক সিইসিকে ধরে রাখা লোকটি জুতার মালা থেকে একটি জুতা নিয়ে তাকে মারধর করছেন। পরে পুলিশ জুতার মালাটি খুলে নিয়ে সাবেক এই আমলাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে থানা থেকে নুরুল হুদাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
রোববার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় প্রহসনের নির্বাচনের অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করে বিএনপি। দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল এই আবেদন জমা দেয়। সেই মামলায় কে এম নুরুল হুদাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে আগামীকাল সোমবার আদালতে তোলা হতে পারে।
২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিইসির দায়িত্ব পালন করা কে এম নুরুল হুদার অধীনে অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনটি ‘রাতের ভোট’ হিসেবে পরিচিতি পায়। সেই নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশ নিলেও কেউই পাত্তা পায়নি সরকারি দল আওয়ামী লীগের কাছে। এর পেছনে নির্বাচন কমিশনকেও পক্ষপাতিত্বের জন্য দায়ী করা হয়। ফলে বাকি দুটি নির্বাচনের চেয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ বেশি বিরোধীদের মধ্যে।
নদীবন্দর/জেএস