দেখতে দেখতে যায় বেলা। সময় কত দ্রুতই না ফুরিয়ে যায়। লিওনেল মেসিকে চোখের সামনে খেলা শুরু করতে দেখেছেন তার অনেক ভক্ত। সেই মেসিও এখন ফুটবল ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে উপনীত হয়েছেন। দেখতে দেখতে ৩৩টি বছর পার করে ৩৪-এ পা দিলেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
আজ মেসির জন্মদিন। ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন, আর্জেন্টিনার ছোট্ট শহর রোজারিও জন্মগ্রহণ করেন গ্রহের সেরা ফুটবলার। জন্মদিনে শুভেচ্ছাসিক্ত হচ্ছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। কোপা আমেরিকা খেলতে তিনি এখন রয়েছেন আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গেই। ব্রাজিলে রয়েছেন বায়ো-বাবল সিকিউরিটির মধ্যে। হয়তো দলের সতীর্থদের সঙ্গেই এই বিশেষ দিনটা উদযাপন করবেন তিনি।
ফুটবলকে কী দেননি মেসি? সেই বাল্যকালে যখন বল পায়ে ছুঁয়েছিলেন প্রথম, তারপর থেকে শুধু বিস্ময়ই জন্ম দিয়ে গেছেন লুইস লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। জীবনের শুরুতে গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছিলেন। কিন্তু পায়ের কারুকাজকে থমকে দিতে পারেনি সেই হরমোনের অভাব। বুয়েন্স আয়ার্সে যে কারণে খুব দ্রুত বার্সেলোনার স্কাউটের চোখে পড়ে গিয়েছিলেন।
এরপরের ইতিহাস তো শুধুই রূপকথার মতো। মাত্র ১১ বছর বয়সে চিকিৎসার খরচসহ আরও অনেক সুবিধা দিয়ে মেসিকে নিয়ে আসা হয় বার্সেলোনায়, লা মাসিয়ায়। বার্সার ফুটবল স্কুল। এখানেই বেড়ে ওঠেন পরবর্তী দেড় দশক ফুটবল দুনিয়াকে শাসন করার ফুটবলার।
২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার হয়ে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন মেসি। পরের তিন-চার বছর শুধু নিজেকে গঠন করেছেন। এরপর ২০০৮-০৯ সালে নিজে যখন পুরোপুরি বার্সার পোস্টার বয় হয়ে উঠলেন, তখনই ক্লাবকে উপহার দিলেন গৌরবময় ট্রেবল। জিতলেন ব্যালন ডি’অর পুরস্কার।
এরপর থেকে এখনও পর্যন্ত ৬টি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি। যা রীতিমত রেকর্ড। ৬ বার জিতেছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন সু’সহ অনেক অনেক পুরস্কার। ক্লাবের হয়ে এমন কোনো শিরোপা নেই যা জিততে পারেননি মেসি।
কিন্তু যে ফুটবলকে সারাজীবন অনেক কিছু দিয়ে গেলেন, সেই ফুটবলই বলতে গেলে খালি হাতে ফিরিয়েছে লিওনেল মেসিকে। ক্লাবের সাফল্য দিয়ে কোনো ফুটবলারের শ্রেষ্ঠত্ব যতটা মাপা হয়, তার চেয়ে বেশি মাপা হয় জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সাফল্য। এই একটি জায়গাতেই মেসির অর্জন একেবারে শূন্য।
২০০৫ সালেই আর্জেন্টিনা দলের হয়ে অভিষেক মেসির। সুযোগ ছিল স্পেনের হয়ে খেলার। কিন্তু তিনি নিজের দেশকে ভুলে যেতে পারেননি। এখনও পর্যন্ত রেকর্ড ১৪৭টি ম্যাচ (হ্যাভিয়ের মাচেরানোর সঙ্গে সমান) খেলেছেন তিনি। গোল করেছেন ৭৩টি।
কিন্তু আক্ষেপটাই তো বেশি। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও সোনালি ট্রফিটা ছোঁয়া হলো না। পরপর দু’বার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও জেতা হলো না লাতিনের শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফিটি। বারবার শুধু বঞ্চিতই হয়েছেন তিনি। এবার আবারও চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে দলকে তুলে দিয়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালে। দেখার বিষয়, মেসিকে কী এবারও খালি হাতে ফেরত দেবে ফুটবল, নাকি খানিকটা হলেও আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেবে!
২০১৭ সালে বাল্যকালের বান্ধবী আনতোনেল্লা রোকুজ্জোকে বিয়ে করেন মেসি। তাদের ঘরে রয়েছে তিন ছেলে। থিয়াগো মেসি, সিরো মেসি এবং মাতেও মেসি।
জন্মদিনে সারাবিশ্বের অগুণতি সমর্থকের কাছ থেকে শুভেচ্ছাবার্তা পাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সমর্থকদের একটাই বক্তব্য, মেসি হলেন সর্বকালের সেরা। দ্য গ্রেটেস্ট অব অলটাইম। সংক্ষেপে, গোট (GOAT)।
নদী বন্দর / পিকে