1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
সৌরশক্তিচালিত নৌযান বানিয়ে তাক লাগালেন মাহমুদ - Nadibandar.com
শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ অপরাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১
  • ১০৫ বার পঠিত

২০১৫ সালের কথা। টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়েছিলেন নাবিক ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। হাওরের অপার সৌন্দর্য উপভোগে বারবার বাধ সাধছিল ইঞ্জিনের শব্দ। অতিরিক্ত শব্দের জন্য অন্যদের সঙ্গে ঠিকঠাক কথাও বলতে পারছিলেন না তিনি। ডিজেলচালিত নৌযান, শব্দদূষণের কারণে জীববৈচিত্র্যের হুমকির বিষয়টিও নজরে আসে তার।

তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন যেভাবেই হোক পরিবেশবান্ধব একটি নৌযান তৈরি করবেন। কিন্তু দেশে এরকম কোনো ডিজাইন পাচ্ছিলেন না। পরে ইন্টারনেটে বিদেশের বিভিন্ন নৌযানের ডিজাইন দেখেন। সে অনুযায়ী যোগাযোগ করেন ফরাসি নৌ-স্থপতি মাইকেল ও কনোরের সঙ্গে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তাদের কাছে একটি নৌযানের ডিজাইন চাইলেন। ডিজাইনও চলে এলো শিগগির। শুরু হলো চূড়ান্ত চিন্তা-ভাবনা এবং তৈরির কাজ।

এভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে যেন অসাধ্য সাধন করে ফেলেন নাবিক ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। শুধু তার স্বপ্নের নৌযান বানালেন না, বানিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অ্যাওয়ার্ডও জিতলেন। জাগো নিউজের কাছে বলছিলেন সেই গল্প।

‘আসলে আমি অনেক আগে থেকেই কল্পনা করে আসছিলাম এরকম একটি নৌযান বানানোর। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছিলাম না। নিজেরও তেমন আর্থিক সাপোর্ট ছিল না।’

 

তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আসা ডিজাইন অনুযায়ী প্রথমে বৈদ্যুতিক চার্জের মাধ্যমে নৌযানটি চালানোর চিন্তা করা হয়। কিন্তু সেটা আবার ব্যয়বহুল ও ঝামেলাপূর্ণ। পরে চিন্তা করলাম সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে করা যায় কি না। তখন তারা বলেন, এটা তো আরও ভালো হয়। শুরু হলো সোলার নিয়ে ভাবনা।

মাহমুদ জানান, পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ সুবিধা সম্বলিত বাংলাদেশের প্রথম সৌরশক্তিচালিত নৌযান এটি। শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণমুক্ত পরিবেশে দিচ্ছে আনন্দযাত্রার সুযোগ। দেশের প্রথম সৌরশক্তিচালিত এ নৌযানটির নাম ‘ইকো মেরিন ক্রুজ-আয়রন’।

বর্তমানে আয়রন অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকার অদূরে রূপগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজ সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে। ছয় কেবিনবিশিষ্ট এ সোলার ড্রাইভেন ইকো ফ্রেন্ডলি ক্রুজে রয়েছে খাবার ও বারবিকিউয়ের ব্যবস্থা।

যেভাবে যা দিয়ে তৈরি
আয়রন নামে এ নৌযানটি পাতলা কাঠ ও ফাইবারগ্লাসের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে। এটি ২০ মিটার লম্বা ও সাত মিটার চওড়া। আয়রনের প্রধান ডেকটিতে বাথরুম ও রান্নাঘরসহ ছয়টি কেবিন রয়েছে। আরেকটি ডেকে অতিথিদের জন্য কয়েকটি টেবিল-চেয়ার-বেঞ্চ বসানো। একেবারে উপরের ডেকের অর্ধেক ছাদ। বাকি অংশে সোলার প্যানেল। ভ্রমণকারী ইচ্ছা করলে শীতের সকালে খোলা ডেকে রোদ পোহাতে পারবেন। দুটি ব্যাটারিচালিত ইঞ্জিনের সাহায্যে নৌযানটি প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। প্রয়োজনে এটি ১৮ থেকে ১৯ কিলোমিটার পর্যন্ত করা যেতে পারে বলে জানান আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।

 

যেভাবে চালিত হয় আয়রন
নৌযানটি দুটি চার কিলোওয়াট (কিলোওয়াট) বৈদ্যুতিক আউটবোর্ড মোটর দিয়ে চালিত হয়। মোটরগুলোকে শক্তি দেওয়ার জন্য ৩৭০-ওয়াট সোলার প্যানেলের ২০টি পাত রয়েছে, যা পূর্ণ দিনের আলোয় সর্বোচ্চ ৭.৫ কিলোওয়াট শক্তি উৎপাদন করে। মোটর ও প্যানেলের মধ্যে ব্যাটারি ব্যাংক বসানো আছে, যা প্রয়োজনে রাতে তিন ঘণ্টার ব্যাকআপ দিতে পারে। এটি শুধু দিনে চলাচল করে। ফলে ব্যাটারি ব্যাংকটি বেশিরভাগ সময় অব্যবহৃত থাকে। বড়জোর বর্ষাকালে রোদ না থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি দিকনির্দেশনার জন্য গাড়ির মতো কাঠের স্টিয়ারিং হুইল ও গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মোটরবাইকের মতো টুইস্ট থ্রোটল রয়েছে।

পরিবেশবান্ধব নৌযানে উৎসাহিত করাই আয়রনের উদ্দেশ্য
ইকো মেরিন ক্রুজ-আয়রন বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে কাজ করছে। সর্বাধিক ৩০ জনের একটি গ্রুপের জন্য বেশ কয়েকটি প্যাকেজ রয়েছে। বাণিজ্য করা মূল উদ্দেশ্য নয় বলে জানিয়েছেন নির্মাতা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।

 

তিনি বলেন, আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা দেখে যেন অন্যরাও পরিবেশবান্ধব এরকম নৌযান তৈরিতে উৎসাহিত হয়। কারণ বাংলাদেশে যে হারে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে তাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হুমকির সম্মুখীন হবে। এ সম্পর্কে আমাদের আগে থেকেই সচেতন হওয়া খুব জরুরি।

আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড
এরই মধ্যে ইকো মেরিন ক্রুজ-আয়রন জয় করেছে গুস্তাভ ট্রুভে অ্যাওয়ার্ড-২০২১। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বৈদ্যুতিক নৌযান প্রতিযোগিতার একমাত্র আন্তর্জাতিক আসরের এ প্রতিযোগিতার কাস্টমাইজ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ নৌযান হিসেবে বিজয়ী হয় আয়রন। যেখানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

 

সুযোগ-সুবিধা
নৌযানটির সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এর উপযোগিতা ব্যাপক। সোলার-ইলেকট্রিক নৌযান চালাতে কোনো খরচ নেই। অবারিত সূর্যালোকে সে দিনভর চলতে পারে সম্পূর্ণ সৌরশক্তিতে। এছাড়া হাওর, কাপ্তাই হ্রদ, হাতিরঝিল, সুন্দরবনের মতো পরিবেশগত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এমন উপযোগী কিছুই নেই। কারণ এ নৌযানের কোনো শব্দ, ধোঁয়া, কম্পন নেই।

আয়রনের ক্যাপ্টেন যা বললেন
ইকো মেরিন ক্রুজ-আয়রন ক্যাপ্টেন সোহেল রানা বলেন, আমি শুরু থেকেই এ নৌযানের সঙ্গে আছি। এরকম একটি পরিবেশবান্ধব নৌযানে কাজ করতে পেরে নিজে গর্বিত। এ নৌযান দিয়ে কয়েকবার ভ্রমণ করেছেন আমেরিকান দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তারা আবারও আসবেন বলে জানিয়েছেন। এখানে তারাই ভ্রমণ করতে আসেন, যারা নীরবে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান। আয়রনে অতি উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজানো অথবা ডিজে পার্টি নিষিদ্ধ।

নদী বন্দর / বিএফ

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com