কয়েকদিন আগেও যে মাল্টা ছিল একান্তই বিদেশি ফল। এ ফল মাগুরার মাটিতে চাষ করে অবিশ্বাস্য সাফল্য দেখিয়েছেন সদর উপজেলার ওলিয়ার রহমান। চার বছর আগে কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিজের তিন বিঘা জমিতে শখের বশে গড়ে তোলেন মাল্টা বাগান। এ বছর বাগান থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি ।
ওলিয়ার রহমান জানান, তার রহমানের ছোটবেলা থেকেই নানান ধরনের গাছের বাগান করার নেশা। ৪ বছর আগে হর্টিকালচারিস্ট ড. মনিরুজ্জামানের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি পরিকল্পনা করেন একটি মাল্টা বাগান করার। সে অনুযায়ী যশোর ঝুমঝমপুর থেকে সংগ্রহ করেন বারি-১ মাল্টার চারা।
তিন বিঘা জমিতে শুরু করেন মাল্টার চাষ। এ বছর তার বাগান ভরে ওঠে মাল্টায়। সব মিলে ৮০০ মণ মাল্টা সংগৃহীত হয়েছে তার বাগান থেকে। দারুণ সুস্বাদু এ মাল্টার খবর ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন মাল্টা কিনতে। ইতোমধ্যে ২৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন তিনি। আরও ৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হবে বলে ধারণা তার।
ওলিয়ার রহমান বলেন, চার বছর আগে আমি এই বাগানের পেছনে ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। তখন মূলত শখের বশেই করেছিলাম। আমি ভাবিনি এই বাগান থেকে এক বছরেই ৩০ লাখ টাকার ফল পাবো। এখন আমার বাগান পরিচর্যার জন্য ৮ জন লোক কাজ করছেন। এ বাগান থেকে আরও ১২ বছর ফল আসবে। আমি স্বপ্ন দেখছি আরও লোকজনকে কাজে নেবো। এই বাগান আরও সম্প্রসারণ করবো।
ময়মনসিংহ থেকে আগত ফল ব্যবসায়ী লোকমান মিয়া বলেন, এই বাগানের মাল্টা খুবই মিষ্টি এবং ফরমালিনমুক্ত। অচিরেই এর বাজার বাংলাদেশের সব অঞ্চলে ছড়িয়ে যাবে।
মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ রোকনুজ্জামান জানান মাগুরার মাটি বেলে দো-আঁশ প্রকৃতির। এ ধরনের মাটি মাল্টা উৎপাদনে সহায়ক। এ ছাড়া এই মাটিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অম্লের উপস্থিতি এবং লবণাক্তহীনতা মাল্টাকে সুস্বাদু করে তুলেছে। আমরা মাগুরায় মাল্টা চাষ নিয়ে আশাবাদী।
ওয়াইআরএফপি (ইয়ার রাউন্ড ফ্রুট প্রডাকশন) প্রজেক্ট -এর প্রকল্প পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশে ২ লাখ মেট্রিক টন মাল্টার চাহিদা রয়েছে, যা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩০ হাজার মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদিত হচ্ছে।
আমরা যদি কৃষকদের উৎসাহিত করতে পারি মাল্টা চাষে, তাহলে ভবিষ্যতে মাল্টা আমদানির প্রয়োজন হবে না। এতে আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।