ক্যালেন্ডারের পাতা ঝরে আরও একটি বছর শেষের পথে। আর কয়েক ঘন্টা পরই অস্ত যাবে ২০২০ সালের সূর্য। পুরোনো জীর্ণতা, দুঃখ আর ব্যর্থতা মুছে নতুন দিগন্তের আশায় নতুন বছর ২০২১ শুরু হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে নতুন বছরের প্রথম মাসে বাংলাদেশ দলও ফিরবে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
১০ জানুয়ারি ঢাকা আসছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। স্বাগতিক বাংলাদেশের সাথে তিন ওয়ানডে আর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে ক্যারিবীয়রা। গত মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের পরে এটিই হবে টাইগারদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফেরা।
২০ জানুয়ারি ঢাকার শেরে বাংলায় প্রথম দিবা-রাত্রির ম্যাচ দিয়ে শুরু ওয়ানডে সিরিজ। আর ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু প্রথম টেস্ট।
প্রাণঘাতী করোনার ভয়াল থাবায় লকডাউনে থাকার সময় বিশ্বের তাবৎ কর্মকাণ্ড ছিল বন্ধ। জনজীবন হয়ে পড়েছিল স্থবির। সেই অবস্থায় অন্যান্য খেলাধুলার মত ক্রিকেটও হয়নি। ১১৭ দিন বন্ধ থাকার পর জুলাই থেকে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে আবার মাঠে গড়ায় ক্রিকেট।
এরপর ধাপে ধাপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব টেস্ট খেলুড়ে দেশই ইতিমধ্যে খেলায় ফিরেছে। মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আবার শুরু হয়েছে। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর পাকিস্তান-ইংল্যান্ড, ভারত-অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা সিরিজ চলছে। বাংলাদেশই বরং একটু দেরিতে ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
সেই ফেরাটা হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নতুন চেহারার এক দলের বিপক্ষে। একটা বড় অংশ তাই খানিক হতাশ। ক্যারিবীয়রা পুরো শক্তির দল নিয়ে আসছে না। টেস্ট আর ওয়ানডে দুই স্কোয়াডই তারকাশূন্য। প্রতিষ্ঠিত ও নামি ক্রিকেটারদের প্রায় কেউই নেই। সবাই করোনার কারণে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের বদলে খেলতে আসছেন এক ঝাঁক কম পরিচিত ক্রিকেটার। তাতে করে শুধু ক্যারিবীয় দলের শক্তিই কমেনি, সিরিজের আকর্ষণও হ্রাস পেয়েছে।
দর্শক-সমর্থকরা তো হতাশই। কি ভাবছেন টাইগার ক্রিকেটাররা? তারাও কি হতাশ? বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক অবশ্য মনে করেন, এতে হতাশার কিছু নেই।
তার মতে, কারা আসছেন কারা নেই এসব না ভেবে একটা টেস্ট দল খেলতে আসছে এবং আট থেকে নয় মাস পর আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার একটা উপলক্ষ তৈরি হয়েছে; সেটাকেই বড় করে দেখা উচিত।
মুমিনুলের কথা, ‘সত্যি কথা বলতে কি ওয়েস্ট ইন্ডিজ লাইনআপ দেখে আমি অবাক। তবে হতাশ হইনি। হতাশ হবার কোনো কারন আছে বলেও মনে করি না। বরং আমি উৎফুল্ল। মনের মধ্যে একটা স্বস্তিও বোধ করছি। একটা অন্যরকম ভালো লাগাও কাজ করছে। কারণ সৃষ্টিকর্তার দয়ায় আবার বেশ কয়েকমাস পর আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারছি। এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে শেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি আমরা।’
আলাপে টাইগার টেস্ট ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমি মোটেই হতাশ নই। তবে খানিকটা অবাক হয়েছি ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোয়াড দেখে। সবাই থাকলে ভালো লাগতো আরও।’
মুমিনুল যোগ করেন, ‘কোন দল আসছে, তারা কতটা সমৃদ্ধ, ভালো না মন্দ-তা নিয়ে না ভেবে বরং খেলাটাকে বড় করে দেখা উচিত। আমরা আবার ঘরোয়া ক্রিকেটের পাশাপাশি টেস্ট-ওয়ানডে খেলতে পারবো, সেই দিকেই নজর দেয়া উচিত। কাদের সাথে খেলা, সেই দলটি কেমন, তা ভেবে আসলে লাভও নেই।’
নিজ দলের ক্রিকেটারদের কাছেও আলাদা কোনো বার্তা নেই টাইগার টেস্ট অধিনায়কের। তার যুক্তি, ‘যারা দেশের হয়ে টেস্ট আর ওয়ানডে খেলেন, তারা সবাই পেশাদার। তাদের সবার পুরোদস্তুর পেশাদারি মানসিকতার। সেখানে খেলাটাই মুখ্য। সবাই জানে, আমাদের কাজ হলো খেলা এবং নিজের তথা দলের সেরাটা উপহার দেয়া। আমার মনে হয় আমরা নিজেদের নিয়েই ভাবছি। ভাববো।’
‘নিজেদের সেরাটা কিভাবে দেয়া যায়, অনেক দিন পর টেস্ট আর ওয়ানডেতে ফিরে কিভাবে সেরা পারফরম করা যায়, সবার ভাবনা আসলে সেটাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কেমন দল তা নিয়ে চিন্তার আসলে কিছু নেই। আমাদের নিজেদের কাজটা যাতে ভালোভাবে করতে পারি, সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমি নিশ্চিত টিম বাংলাদেশের সবাই তেমনই ভাবছে।’
নদী বন্দর / পিকে