ঝিনাইদহের মহেশপুর দিন দিন বাড়ছে মাছের চাষ এবং মৎস্য চাষির সংখ্যা। কিন্তু করোনার পর থেকেই বাড়তি মাছের খাবারের দাম। পাশাপাশি মাছের কম দাম আর ব্যবসায়ীদের নানা অজুহাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মৎস্যচাষিরা।
মাছ চাষি রেজাউর ইসলাম বলেন, ‘মাছ চাষে বেশি লাভ পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যায় ফেলে দিয়েছে খাবারের দাম। ২০ কেজির বস্তায় তিন দফায় কেজিতে তিন টাকা করে বেড়েছে। অন্যদিকে মাছের দামও কমেছে প্রতি মণে গড়ে ২ হাজার টাকা। এই অবস্থায় খাবারের দাম না কমলে আমরা শেষ হয়ে যাবো।’
অপর এক মাছ চাষি রিয়াজ জানান, ‘তেলাপিয়া মাছের খাবারের ২৫ কেজি বস্তা গত বছর কিনেছি ১১০০ টাকা করে। কিন্তু চলতি বছর একই বস্তা কিনতে হচ্ছে ১২২৫ টাকা করে। এভাবে খাবারের দাম বাড়লে মাছ চাষ করবো কিভাবে।’
মাছের খামারি আহসানুজ্জামান রুমেল বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে পুকুরগুলোতে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। মাছ চাষ কৃষির অন্তর্ভুক্ত হলেও পুকুর সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় বাণিজ্যিক হারে। একইসঙ্গে মাছের খাবার, ওষুধ, লবণ, চুনসহ মাছ চাষের প্রয়োজনীয় সব উপকরণের দাম বাড়লেও বাড়েনি মাছের বিক্রয়মূল্য। এতে মাছ বিক্রিতে লাভবান হওয়া তো দূরে থাক, উল্টো লোকসান গুণতে হচ্ছে আমাদের।’
মাছের খাবারের ব্যবসায়ী মানিক ও মোসারফের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, কোম্পানির কাছে জানতে চাইলেই বলে কাঁচামালের দাম বেড়েছে তাই খাবারের দামও বেড়েছে। কিন্তু সরকার যদি সঠিক ভাবে মনিটরিং করতো তাহলে এমনটি হতো না বলেও জানান তারা।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মহেশপুর উপজেলায় প্রতি বছর মাছের উৎপাদন হয় ১০ হাজার ২০০ মেট্রিকটন। এই পরিমাণ মাছের উৎপাদনের জন্য খাবারের প্রয়োজন হয় ১১ হাজার ৪০০ মেট্রিকটন। আর জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রতি বছর মাছের উৎপাদন হয় ৪৫ হাজার ২৪৭ মেট্রিকটন। এই মাছ উৎপাদনে খাবারের প্রয়োজন হয় প্রায় ৫০ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন। জেলায় মোট মাছ চাষির সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৪৫ জন।
ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘খাবারের দাম যাতে কমানো যায় সে ব্যাপারে বারবারই ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করছি। কিন্তু তারা আমাদের বলছে করোনার কারণে দাম বেড়েছে। তবে এ পরিস্থিতি কেটে গেলে হয়তো খাবারের দাম কমে যাবে। মাছের দামও বাড়বে।’
নদী বন্দর / বিএফ