এই অঞ্চলের আদি ধান আঊশ। আশু শব্দ থেকে আউশের উৎপত্তি হলেও এর অর্থ আগাম। আশি থেকে ১২০ দিনের মধ্যে এ ধান ঘরে তোলা যায়। খনার বচনে আছে আউশ ধানের চাষ, লাগে তিন মাস। আগাম এ ধান এবার শুধু চাষে নয়, ফলনেও এগিয়েছে বেশ। আউশের জীবনকাল কম ও পানি সাশ্রয়ী। সার দেয়া লাগে কম। আগাছা দমনের ক্ষমতা আউশের চেয়ে অনেক বেশি। তাই বোরো-ইরি ও আমন ধানের চেয়ে অনেক খরচ কম হয় কৃষকের আউশ চাষে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় আউশের ফলন এবার বোরো-ইরিকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি কাঠায় মণের উপর ধানের ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেব মতে চলতি মৌসুসে এ উপজেলায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো। চাষ হয়েছে দুই হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এ বছর নয়শ চাষিকে আউশ ধানের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ধানের বীজ পাঁচ কেজি, এমওপি দশ এবং ডিএপি সার কুড়ি কেজি ছিলো বিঘা প্রতি। এবার আউশে বিআর-২৬, ব্রি ধান-২৮, ৪৮, ৫০, ৫৫, ৫৮, ৬৩, ৮২ ও ৮৩, বিনা ধান-১৯, মিনিকেট, রহিম স্বর্ণ, শুভলতা, গণতারা, জিএস ওয়ান, জামাইবাবু, হাইব্রিড ইস্পাহানি, সিনজেন্টা, ১২০৬, তেজগোল্ড, এসএলএইটএইচ, হিরা ও অ্যাগ্রো ধান-১৪ জাতের ধানের চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ আউশ ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। যা দুএক বিঘা আছে, তা এ সপ্তাহে কাটা হয়ে যাবে। কথা হয়, উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ লাল্টুর সাথে। তিনি বলেন, বোরোইরি চাষের অর্ধেক খরচও আউশ ধানে হয় না। এ মৌসুমে সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছি। ব্রি-৪৮ জাতের ধানে বিঘায় কুড়ি মণ ফলন পেয়েছি। প্রতি বিঘা ধান চাষে খরচ হয়েছে সাত হাজার টাকা করে। আউশ ধান চাষে এটা সর্বোচ্ছ ফলনের দাবি করেন চাষি লাল্টু। একই গ্রামের জয়নাল আলী বলেন, বোরোইরির চেয়ে আউশ চাষে ফলন বেশি পেয়েছি। দশ কাঠার একটি জমিতে বোরোইরি ফলে ছিল ১০ মণ। সে জমিতে মিনিকেট জাতের আউশ ধান চাষ করে ফলন পেয়েছি এগারো মণ। অথচ, চাষে বোরোইরির তিনভাগের একভাগ খরচ হয়েছে আউশ ধান চাষে। উপজেলার বল্লা গ্রামের ইজহারুল ইসলাম বলেন, আউশ ধানে এতো ফলন আগে হয়নি। উপজেলার কানাইরালীর ধান ব্যবসায়ী গোলাম রসুল বলেন, প্রতি মণ ধান প্রকার ভেদে ৯২০ থেকে হাজার টাকায় কেনা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, কৃষক ধানের কাঙ্খিত দাম পাওয়ায় চাষ বেড়েছে। অনুকূল আবহাওয়া আর কৃষি বিভাগের তৎপরতায় চলতি মৌসুমে আউশ ধান চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। ব্রি-৪৮ জাতের ধানটি আউশ আবাদে উপযোগি বলেও দাবি করেন তিনি।
নদী বন্দর / পিকে