মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্কুল-কলেজ খুললেও খোলেনি বিশ্ববিদ্যালয়। বেকারত্ব, অভাব-অনটন ও অবসর সময়ে যেখানে শিক্ষার্থীরা টিকটক, লাইকি, পাবজি কিংবা ফ্রি-ফায়ারের মতো অনলাইন গেমে আসক্ত ছিল সেখানে নিজেকে সাবলম্বী করে তুলতে ব্যস্ত ছিলেন নাফিজ।
স্বল্প পুঁজিতে গড়ে তুলেছিলেন সোনালি মুরগির খামার। এভাবেই একটু একটু করে বেড়ে ওঠা নাফিজের শখের খামার এখন তার আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। নিজেকে স্বাবলম্বী করে পাশে দাঁড়িয়েছেন বাবা-মায়ের।
মো. নাফিজ আহমেদ সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক (২০১৯-২০২০ বর্ষের) শিক্ষার্থী। তিনি গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর উপজেলার লাঘালিয়া গ্রামের সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুর রহীমের বড় ছেলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থী নাফিজ তার বাড়ির পাশে নিজ হাতে গড়া খামারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শখ করে নাম রেখেছেন আলবারাকাহ্ পোল্ট্রি ফার্ম। নাফিজ বলেন, ‘আমি আমার এলাকার লোকজনকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। প্রথমে আমার খামারে মুরগির সংখ্যা ছিল মাত্র ২০টি । ধীরে ধীরে মুরগির সংখ্যা বেড়ে এখন ১ হাজার ২০০টি মুরগি আমার খামারে রয়েছে।‘
মুরগির স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতে কি ধরনের খাদ্য ব্যবহার করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুরগির যত্নে রাসায়নিকমুক্ত সম্পূর্ণ দেশি ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি খাবার খামারে ব্যবহার করি। ১ হাজার ২০০ মুরগির জন্য দুই মাসে দুই টন খাদ্য লাগে। স্টেরয়েডমুক্ত মুরগি পালন করি বিধায় এলাকাবাসী বেশি দাম দিয়েও অনেক সময় নিয়ে যায়।
মুরগির যত্ন ও খামার পরিচ্ছন্নতায় কি ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাতদিন অন্তর লিটার পাল্টে দেই। কিছুদিন পর পর ডাক্তার এসে পরীক্ষা করেন মুরগিগুলো সুস্থ আছে কি না। তাছাড়া মোটাতাজাকরণে ইনজেকশন প্রয়োগ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকি।
মুরগি বড় করতে কতদিন সময় লাগে ও দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি জানান, একদিন বয়সের মুরগির বাচ্চা কিনে আনি। লালন-পালন করে মোটামুটি বড় করতে ৬০-৭০ দিনের মতো সময় লাগে। তারপর ডিম পাড়ার আগ মুহূর্তে বিক্রি করি। তবে নির্দিষ্ট কোনো দাম নেই। দাম নির্ভর করে মুরগির ওজনের ওপর।
মুরগি লালন-পালন করতে পুঁজি কোথা থেকে পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবার কাছ থেকে মাত্র ৫০০ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করি। কয়েক মাসের কঠোর পরিশ্রমেই নিজেকে দাঁড়া করাতে পেরেছি। তাছাড়া মা-বাবা সব সময় আমার পাশে ছিলেন। কখনো কোনো ব্যতিক্রমী উদ্যোগে নিষেধ না করে বরং সাহস জুগিয়েছেন।
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কোনো বার্তা দিতে চান কি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার সমবয়সী বা আমার ছোট-বড় যারা স্বপ্ন দেখছেন নিজে কিছু করে পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। তারা যে যেই কাজে পারদর্শী সেই কাজের দ্বারা নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলুন।
কেননা আজকাল চাকরির বাজারে সবার জায়গা হয় না। বেকারত্বের খাতায় নাম উঠে যায়। সেই সব ভাই-বোনদের কাছে আমার বার্তা থাকবে যদি অবসর থাকে তাহলে বসে না থেকে অলস সময়টুকু নিজেকে গড়তে কাজে লাগান।
নদী বন্দর / এমকে