যশোর সদর, ঝিকরগাছা, বাঘারপাড়া, চৌগাছা ও মনিরামপুর উপজেলায় এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে লাভের আশায় ব্যাপকহারে শিমের চাষ করেছেন কৃষকরা। শিম শীতকালীন সবজি হিসেবে মানুষের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি। শীত মৌসুম শুরুর দিকে উৎপাদন কম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় বাজারে দাম বেশি থাকে।
আর এই অসময়ে বেশি দামে শিম বিক্রির আশায় যশোরের চাষিরা গ্রীষ্মের শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে শিমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।
জানা যায়, শীত মৌসুম শুরুর আগেই কৃষক ক্ষেত প্রস্তুত করে বপন করেন শিমের বীজ। শীতের শিম বিক্রি করে বেশ লাভবান হওয়া যায়না। কৃষক বেশি লাভের আশায় শীতের শিম এখন চাষ হচ্ছে গরমে। নতুন চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বি। বাড়ির চালে, মাচায়, রাস্তা বা পুকুর পাড় এমনকি জমির আইলে এ সবজি চাষ করা যায়। নতুন শিম বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠী, ছাতিয়ানতলা, নুরপুর, দোগাছিয়া, আমবটতলা, বেলতলা, সাতমাইল, ষলুয়ায় ব্যাপক আকারে অগ্রিম জাতের শিম চাষ হয়েছে। গত সিজনেও একই মাঠে অগ্রিম বাম্পার শিম চাষ হয়েছে। হাশিমপুর, ঘুরুলিয়া, চানপাড়া, হামিদপুর, রুপদিয়া, ফতেপুর, সাড়াপোল, রুপদিয়া, মাহিদিয়া, মেঘলা, নতুনহাট, এড়েন্দা, পদ্মপুকুর, সুজলপুর, ফরিদপুর, আন্দুলিয়া, বারিনগর গ্রামে অগ্রিম শিম চাষ হয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলার কাশিপুর, পারবাজার, পানিসারা, কুলিয়া, বল্লা, বাঁকড়া, খাটবেড়ে, বেনেয়ালী, ফতেপুর, শিমুলিয়া, শ্রীরামপুর, ছুটিপুর, দত্তপাড়া, কায়েমকোলা, জামালপুরের মাঠে অগ্রিম শিম চাষ হয়েছে। মনিরামপুর উপজেলার প্রস্তাবিত থানা রাজগঞ্জ এলাকার সব্জীগ্রাম হায়াতপুর সহ আশে পাশের সকল গ্রামে অগ্রিম শিম চাষ হয়েছে। অতীতের যে কোন বছরের তুলনায় এবার অগ্রিম শিম চাষ বেশি হয়েছে। মশ্মিনগর ইউপির শাহপুর, শয়লা, রামপুর, হাজরাকাঠী, নোয়ালী, পারখাজুরা, চাকলা, কাঁঠালতলা, ভরতপুর এলাকায়সহ প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে।
শিম চাষি ইনতাদুল বিশ্বাসের বলেন, শিম শীতকালীন সবজি হলেও লাভের আশায় আগাম ফলন পেতে অনেকেই গ্রীষ্মেই চাষ করেছেন। এবারের মৌসুমে আমি ১ বিঘা জমিতে রূপবান জাতের শিমের চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কোনো দুর্যোগ দেখা না দিলে লাখ টাকার শিম বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি।
উপজেলার কৃষি অফিসার সমরেন বিশ্বাস জানান, অনেক আগে থেকেই এ অঞ্চলে গ্রীষ্মের সময়েই শিম চাষ করছেন কৃষকরা। চাষিরা যাতে শিম উৎপাদনে কোনো সমস্যায় না পড়ে সেজন্য তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, শিম একটি প্রয়োজনীয় সবজি। এতে ভিটামিন ও খনিজ লবন প্রচুর পরিমানে রয়েছে।
এছাড়া এটি জনপ্রিয় সবজি হিসেবে গণ্য বহু দিন থেকে। চৌগাছায় ১৮০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ চৌগাছা উপজেলায় এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে হয়েছে শিম চাষ। শিম শীতকালীন সবজি হিসেবে গ্রাম বাংলা এমনকি শহরের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি। শীত মৌসুম শুরুর দিকে উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে দাম বেশি থাকে। এই অসময়েও বেশি দামে শিম বিক্রির আশায় যশোরের চৌগাছার চাষিরা গ্রীষ্মের শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
ইতোমধ্যে অধিকাংশ ক্ষেতের প্রতিটি গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। কোনো প্রাকৃতিক দূুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে শিম বিক্রি করে চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছেন। শীত মৌসুম শুরুর আগেই কৃষক ক্ষেত প্রস্তুত করে বপন করেন শিমের বীজ। পুরো শীতে শিম বিক্রি করে বেশ লাভবান হন। শীতের শিম এখন চাষ হচ্ছে গরমে। নতুন চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বি। শিমে অন্যান্য সবজির মতো ভাইরাস নেই বললেই চলে। সব ধরনের মাটিতেই শিমের চাষ হয়। বাড়ির চালে, মাচায়, রাস্তা বা পুকুর পাড় এমনকি জমির আইলে এ সবজি চাষ করা যায়। বাজারে শিমের চাহিদা ভালো, দামও বেশি, তাই গ্রীষ্মের শিম চাষে ঝুঁকছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চৌগাছাতে এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। রূপবান ও ইসপা-২ জাতের শিম বেশি চাষ হচ্ছে। উপজেলার সিংহঝুলী, ফুলসারা, নারায়নপুর, স্বরুপদাহ ইউনিয়নের বেশ কিছু মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা গ্রীষ্মের শিম অত্যন্ত যত্নসহকারে মাচায় চাষ করেছেন। অধিকাংশ জমির শিমে ইতোমধ্যে ফুলে ভরে উঠেছে। আর সপ্তাহ দুয়েক পরেই কৃষক তার পরিশ্রমের ফল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন।
পেটভরা গ্রামের শিম চাষি ইনতাদুল বিশ্বাস সাথে বলেন, শিম মূলত শীতের সবজি, কিন্তু গ্রীষ্মেও এর চাষ হচ্ছে, ফলনও আশানুরূপ। তাই আগাম শিম চাষ করেছি। চলতি মৌসুমে আমি এক বিঘা জমিতে রূপবান জাতের শিমের চাষ করেছি। এপর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কোনো দুর্যোগ দেখা না দিলে লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, গ্রীষ্মের শিম চাষে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব কিছুটা বেশি থাকে, তবে নিয়মিত জমি পরিচর্যা করলে পোকায় শিম বেশি ক্ষতি করতে পারে না। নিয়মিত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে শীতের মতোই শিম গাছের গ্রোথ খুবই ভালো থাকে। এই মাঠে কৃষক ইনতাদুল বিশ্বাসের মতো কৃষক আব্দুল মালেক ১ বিঘা, শহিদুল ইসলাম দেড় বিঘা, শফিকুল ইসলাম ১ বিঘা, সাইফুল ইসলাম ২ বিঘা, হাবিবুর রহমান ১ বিঘা, টিপু সুলতান ১ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন।
উপজেলার ফুলসারা ও সিংহঝুলী ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের চাষিরা তুলনামূলক নিচু জমিতে গ্রীষ্মের শিম চাষ করেছেন বলে খবর পাওয়া
গেছে। কৃষকরা যেসব জমিতে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি জমে থাকে, সেই জমিতে শিম চাষ করে লাভবান হয়েছেন। গত ৬/৭ বছর ধরে চাষিরা নিচু জমিতে উঁচু বেড তৈরি করে সেই বেডে রোপণ করেন শিমের বীজ।
একাধারে বৃষ্টিপাত হলেও এসব জমির শিম নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম থাকে বলে কৃষকরা জানান। উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে চৌগাছার কৃষকরা বেশ পারদর্শী। অনেক আগে থেকেই এ অঞ্চলে গ্রীষ্মের শিম চাষ হচ্ছে। কৃষক যাতে এসব ফসল উৎপাদনে কোনো সমস্যায় না পড়েন সে জন্য কৃষি অফিস সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে।
নদী বন্দর / বিএফ