বাংলাদেশ থেকে বেনাপোল হয়ে ভারত যাত্রার ঐতিহাসিক যশোর রোডের বাংলাদেশ অংশের ৩৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন সুবাতাস (সুন্দর বাংলাদেশ ও তারুণ্যের সমন্বয়) নামে একটি সংগঠনের সাতজন সদস্য। ইতিহাস কে আরো সমৃদ্ধ করতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে সেই ইতিহাস গ্রহন যোগ্য করতেই এই প্রশংসনীয় উদ্যেগ তাদের।
সোমবার বেলা ১২টায় যশোর শহরের মুজিব সড়ক থেকে পদযাত্রা শুরু করেছেন সুবাতাসের আহ্বায়ক সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী হাসান মাহমুদসহ তার সহযোগী ঢাকা থেকে আসা চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহীনূর আক্তার শাহীন, সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খান, কলেজছাত্রী মারজানা আক্তার, যশোরের সাংবাদিক নিশাত বিজয়, শিক্ষার্থী শাখাওয়াত খান এবং শিক্ষার্থী মিঠুন চক্রবর্তী মাহি। এটি একটি সমন্বিত পথযাত্রা।
পদযাত্রার আগে প্রেসক্লাব যশোরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সুবাতাসের আহ্বায়ক হাসান মাহমুদ বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যশোর রোডের একটা ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। পথযাত্রার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধে কোটি বাঙালির বেদনাদায়ক সেই ঐতিহাসিক পদযাত্রাকে স্মরণ।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের র্ববরোচিত হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে যুদ্ধের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর মাসে যশোর রোড ধরে কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন ভারতে। এই রাস্তাটিই ছিল সেইসব মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। চলার পথে সে সময় অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলেও পড়েন। এই পথের প্রতিটি ধূলিকণা শরণার্থী সেই মানব স্রোতের ক্লান্তি, দুর্ভোগ আর বয়ে বেড়ানো স্বপ্নের সাক্ষি।
তিনি বলেন, সেইসময় মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ শরণার্থীদের দূর্দশা আর বেঁচে থাকার আকুতি দেখে লেখেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। তা বিশ্ব দরবারে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামকে ফুটিয়ে তোলে। তার উদ্যোগ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই সময় আয়োজন করা হয় কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। পন্ডিত রবিশঙ্কর ও তার বন্ধু ব্যান্ড সম্রাট জর্জ হ্যারিসন নিউ ইয়র্কে আয়োজন করেন কনসার্টটি। দুইবছরের বিরতি চলাকালে বব ডিলান পারফর্ম করেন সেই কনসার্টে।
পরবর্তীতে সেই কবিতার বাঙলা অনুবাদ করে খুব যত্ন করে গান মৌসুমী ভৌমিক। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরের বাংলাদেশে আমরা স্মরণ করছি, শ্রদ্ধা জানাচ্ছি অ্যালেন গিন্সবার্গ, বব ডিলান, পন্ডিত রবিশঙ্কর, জর্জ হ্যারিসন, লিওন রাসেল, রিঙ্গো স্টার, বিলি প্রেস্টন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও মৌসুমী ভৌমিককে।
হাসান মাহমুদ জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই পদযাত্রা ২৮ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। প্রথমদিন তারা যশোরের ঝিকরগাছা পর্যন্ত হাঁটবেন। রাতে সেখানেই রাত্রিযাপন এবং পরদিন সকালে ফের শুরু হয়ে বেনাপোলে গিয়ে শেষ হবে। চলার পথে তারা ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবেন। সেখানে তারা করোনা ও ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতার বিষয়ে কথা বলবেন। একই সাথে শিক্ষার্থীদের মাঝে মহান মুক্তিযুদ্ধে এই সড়কের গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা এবং মাস্ক ও স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হবে।
হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা চাই যশোর রোডটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে যেন বিশ্বের দরবারে আসন পায়। সেলক্ষ্যে প্রতিবছর যশোর রোডে এভাবে পদযাত্রা করার ইচ্ছা আছে।
নদী বন্দর / বিএফ