টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরশত্রু পাকিস্তানের কাছে বড় হার কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ভারতীয় দলের সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই হারের যন্ত্রণা মেটাতে এখন তাই ক্রিকেটারদের রীতিমতো উদোম করে সমালোচনা করছেন তারা।
দুবাইয়ে কাল ১০ উইকেটে হারে ভারত। ব্যাটিংয়ে এক বিরাট কোহলি ও রিশাভ পান্ত ছাড়া কেউই রান করতে পারেননি। বোলিং একটু ভালো করেছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। বাদ বাকি সবাই ছিলেন চরম ব্যর্থ। সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তাই বাকি ৮ ক্রিকেটার।
এর মধ্যে আবার একটু বেশি ঝড় যাচ্ছে মোহাম্মদ শামির ওপর দিয়ে। দলের বাকি বোলারদের চেয়ে খরুচে ছিলেন এই পেসার। ইনিংসের ১৮তম ওভারে পাঁচ বলেই দিয়ে ফেলেন ১৭ রান। তাতেই ‘বলির পাঠা’ শামি। তার ওপর মুসলিম হওয়ায় অনেক উগ্রপন্থী সমর্থকদের রোষানলে এখন এই পেসার।
ম্যাচ শেষের পরপরই শামির ইনস্টাগ্রামে হামলে পড়েন ওই উগ্র সমর্থকরা। একজন তাকে বিশ্বাসঘাতক বলে লেখার অযোগ্য গালাগাল করেন। কেউ তাকে বলেছেন, ‘ভারত দলের পাকিস্তানি খেলোয়াড়।’ কেউ আবার লিখেছেন, ‘পাকিস্তানি দলের দ্বাদশ খেলোয়াড়।’ একজন আবার ছাড়িয়ে গেছেন সমস্ত মাত্রা। সরাসরি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে লিখেছেন দিয়েছেন, ‘মুসলিম।’
এখানেই শেষ নয়, তার বিরুদ্ধে এক ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থক এনেছেন ম্যাচ পাতানোর মতো বড় অভিযোগ। তিনি লেখেন, ‘মহারাজ, নিজের জাতভাইদের জেতানোর জন্য পাকিস্তান থেকে কত টাকা খেয়েছ? অন্তত একটু লজ্জা দেখাও।’ আরেকজন তাকে পাকিস্তানের চর বলে পরামর্শ দিয়েছেন সেদেশেই চলে যেতে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে শামির প্রতি এই বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যে ভরা একটি ছবি আবার রিটুইট করেছেন ক্রীড়াসাংবাদিক ও বিশ্লেষক জ্যারড কিম্বার। ব্যথিত কিম্বার এরপর উগ্রপন্থীদের উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘আজ যাকে আপনারা পাকিস্তানি বলে গালি দিচ্ছেন, সর্বশেষ দেখায় এই শামিই ভারতের সেরা বোলার ছিলেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে শামির স্পেলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিল পাকিস্তান।’
শুধু কিম্বার নয়, আরও অনেক সাংবাদিককে শামির পাশে এসে দাঁড়াতে গেছে। অনেকে আবার পুরো ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রশ্ন রেখেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধুমাত্র মুসলিম হওয়ার জন্য এত সমালোচনার শিকার হওয়া শামির জন্য সবাই কেন এগিয়ে আসছে না।
বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বিশ্বজুড়ে চলছে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন। গত ইউরোতে নিজের দলের এক ফুটবলার বর্ণবৈষম্যের শিকার হলে, ইংল্যান্ড তারকা হ্যারি কেইন বলেছিলেন, তাদের অমন কুৎসিত মানসিকতার সমর্থক প্রয়োজন নেই। সেই প্রসঙ্গ টেনে সাংবাদিক পার্থ এমএন লিখেছেন, ‘আজ পাকিস্তানের কাছে হারার পর শামিকে অপদস্ত করা হলো। সময় এসে গেছে, ভারতীয় দলের হিন্দু ক্রিকেটারদের মুসলিম সতীর্থদের পাশে এসে দাঁড়ানোর।’
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট বরখা দত্ত। তিনি এক টুইটে লেখেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেট দল ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে শরীক হয়ে, হাঁটু গেঁড়ে প্রতিবার করল। অথচ ভারতীয়দের সঙ্গে এর কোনো সংযোগ নেই। কিন্তু মোহাম্মদ শামিকে ধর্মীয়ভাবে অনলাইনে হেয় করা হলো, আর সবাই চুপ। আমরা আরও ভালো কিছু আশা করেছিলাম বিরাট কোহলি।’
নদী বন্দর / এমকে