বঙ্গবন্ধুর নামে জাতিসংঘ প্রবর্তিত পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেছেন, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। স্বাধীনতা-উত্তর এবং স্বাধীনতা-পূর্ব বঙ্গবন্ধুর যে কর্মকাণ্ড ছিল তা আলোচনা করার জন্য বহু সময়ের দরকার।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ প্রবর্তন করায় এর ওপর সংসদে আনীত প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সোমবার (১৫ নভেম্বর) তিনি এ কথা বলেন। এর আগে কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ ধারা অনুযায়ী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এ প্রস্তাব আনেন।
এমপি হারুনুর রশিদ এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা উল্লেখ করে আব্দুস শহীদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় অর্জন। এই অর্জন নিয়ে পাঁচ মিনিটে আলোচনা করা সম্ভব নয়। স্বাধীনতা-উত্তর এবং স্বাধীনতা-পূর্ব বঙ্গবন্ধুর যে কর্মকাণ্ড ছিল তা আলোচনা করার জন্য বহু সময়ের দরকার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, আজ এমন একটি সময়ে আমরা এই আলোচনা করছি যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। পরপর তিন বার তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭২ সালের সংবিধান বঙ্গবন্ধু কর্তৃক রচিত হয়েছে। এই সংবিধানের আজকের অবস্থা কী? আজকে সাধারণ আলোচনায় ১৪৭ বিধিতে যে বিষয়টি আলোচনার অনুমতি দিয়েছেন, আমি আপনার (স্পিকার) কাছে অনুরোধ রাখবো বর্তমানে দেশে যে সংকট চলছে আমরা যদি সাধারণ সংসদ সদস্য এই ১৪৭ বিধিতে আলোচনার প্রস্তাব দেই এগুলোর সুযোগও আপনাকে দিতে হবে।
‘এটা আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ। কারণ বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় দেড় বছরের অধিক করোনাকালীন সময়ের পর আমরা স্বাভাবিক পর্যায়ে। সেই অবস্থায় আমাদের দেশের অর্থনীতি, দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা, দ্রব্যমূল্যসহ সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, সে বিষয়গুলো আপনাকে আলোচনা করতে দিতে হবে। কারণ দুই মাস পর সংসদ অধিবেশন হচ্ছে।’
তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একপর্যায়ে বললেন- বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এটা সত্য। কিন্তু বাংলাদেশের ই-কমার্স গত দুই মাস আগে ভয়াবহ আলোচনায় এসেছে। আজকে ই-কমার্সের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এর দায়বদ্ধতা নাই। এর জবাবদিহিতা নাই। আজকে অনলাইন কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রসার ঘটছে। এটা সত্য। কিন্তু অনলাইনে যে গতিতে প্রসার ঘটছে তার পাশাপাশি ডিজিটাল আকারে দুর্নীতি হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি আমরা?
এমপি হারুন বলেন, নিঃসন্দেহে এই পুরস্কারের মাধ্যমে যেমন আমরা গৌরবান্বিত হচ্ছি, পাশাপাশি আমরা যে সমস্ত বিষয়গুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি সেগুলো নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার। আজকে গণতন্ত্র সূচকের অবস্থা কী? ১০০টি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব সম্মেলন হবে। সেখানে বাংলাদেশের নাম নাই। এগুলো হতাশার, এগুলো উদ্বেগের, এগুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা হওয়া উচিত। কেন আমরা আজকে এই অবস্থায় যাচ্ছি? এসব নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি দুই মাস আগেও স্বাস্থ্যখাতের কথা বলেছিলাম সংসদে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে আমি দেখি নাই।
সত্যকে স্বীকার করা বড় কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এতে আমাদের দেশের অনেক কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। মেট্রোরেল হচ্ছে। টানেল হচ্ছে। হাইওয়ে হচ্ছে। অনেক কিছুই হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত সংসদে আইন পাস করছি। কিন্তু আজকে সংকটগুলো থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবো এই জায়গাগুলো আমাদের ঠিক করতে হবে। এই জায়গাগুলো নিয়ে আলোচনা করলেই আজকে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে এগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে। তামাশা করা হচ্ছে। আমি মনে করি শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ আলোচনা হওয়া দরকার।
বাংলাদেশের যারা শিক্ষা-সংস্কৃতি অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করবেন তাদেরকেও এ ধরনের পুরস্কার দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন তিনি।
নদী বন্দর / পিকে