দেশের ৫০টি অঞ্চলে ‘পথে পথে বিজয়’ শিরােনামে আঞ্চলিক মহাসমাবেশের আয়ােজন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বছরব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে শত্রুমুক্ত হওয়ার দিনে এই মহাসমাবেশ করা হবে।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এই ঘোষণা দেন।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য বছর ২০২১ সাল। এই গুরুত্বপূর্ণ মাহেন্দ্রক্ষণ আমাদের প্রত্যেকেরই উদযাপন করা উচিৎ। এই গুরুত্বপূর্ণ আনন্দঘন মুহূর্ত উদযাপন করতে ফিরে যেতে চেয়েছি আমাদের গৌরবময় ইতিহাসে, তুলে ধরতে চেয়েছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরিচয়। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় অর্জন করেছে, কিন্তু দেশের অনেক অঞ্চলে বিজয় এসেছিল ১৬ ডিসেম্বরের আগেই, হয়েছিলা শত্রুমুক্ত। সেভাবেই আমাদের প্রথম বিজয় আসে
পঞ্চগড়ে, নভেম্বরের ২৯ তারিখে এবং সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চগড়কে শত্রুমুক্ত অঞ্চল (মুক্তাঞ্চল) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে আরও অনেক অঞ্চলও শত্রুমুক্ত হওয়া শুরু হয়।
তিনি বলেন, আমরা এই বিজয়গুলাে উদযাপনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে শত্রুমুক্ত অঞ্চলগুলোর তাৎপর্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমরা এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ওপর ভিত্তি করে ধারাবাহিক অনুষ্ঠান আয়ােজনের মাধ্যমে উদযাপন করবাে বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী, যার নাম ‘পথে পথে বিজয়’।
মন্ত্রী বলেন, এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বীর মুক্তিযােদ্ধাসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে ৭টি আঞ্চলিক ও ১৪টি উপ-আঞ্চলিক মহাসমাবেশ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠান আয়ােজনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিজয়ের গল্পগুলাে পুনরায় বলা, স্থানীয় বীর মুক্তিযােদ্ধাদের সম্পর্কে পুনরায় জানা এবং সম্মান প্রদর্শন, যুদ্ধের অসাধারণ গল্পগুলাে উপভােগ করা। এছাড়া আগামীর তরুণদের যুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, সবাইকে এই বিজয় দিবসের বিশালতা উপলব্ধি করানো এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দেশব্যাপী উদযাপন।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আঞ্চলিক বা উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে সব অনুষ্ঠানে স্থানীয় বীর মুক্তিযােদ্ধাদের সম্মাননা প্রদর্শন করা হবে। প্রতিটি অঞ্চলের উপ-অঞ্চলগুলোতে বীর মুক্তিযােদ্ধা সমাবেশের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। এর মধ্যে ২ ডিসেম্বর পঞ্চগড়, ৬ ডিসেম্বর যশাের, ৭ ডিসেম্বর গােপালগঞ্জ, ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা, ১১ ডিসেম্বর জামালপুর, ১২ ডিসেম্বর কক্সবাজার, ১৫ ডিসেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর দিনাজপুর, ২৮ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও, ৩০ নভেম্বর মাগুরা, ২৮ নভেম্বর ঝিনাইদহ, ১ ডিসেম্বর ফরিদপুরে ৩ ডিসেম্বর মাদারীপুর, ৪ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৬ ডিসেম্বর ফেনী ও ময়মনসিংহ, ৮ ডিসেম্বর শেরপুরে, ৯ ডিসেম্বর মীরসরাই, ১১ ডিসেম্বর পটিয়া, ১১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠান হবে।
তিনি বলেন, এসব মহাসমাবেশ শহরের প্রাণকেন্দ্রে যেখানে বীর মুক্তিযােদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী, ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারবে এমন উন্মুক্ত স্থানে এ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মহাসমাবেশে বিভিন্ন কার্যক্রম প্রদর্শনী, খেলা, কুইজ, আলােচনা, সংবর্ধনা, পুরস্কার বিতরণসহ বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হবে।সারাদিনব্যাপী আয়ােজিত অনুষ্ঠানে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বীর মুক্তিযােদ্ধাসহ অন্যান্য নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এ আঞ্চলিক মহাসমাবেশে অংগ্রহণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাংসদ শাহজাহান খান উপস্থিত ছিলেন।
নদী বন্দর / এমকে