সাগরে জলদস্যুতার অপরাধে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখে সংসদে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১’ পাস হয়েছে। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠান ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন রোববার (২৮ নভেম্বর) ১৯৭৪ সালের ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন’ আইন সংশোধন করে নতুন এটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
কোনো ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাসের চেষ্টা বা সহায়তা করলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বিলটি পাস হওয়ায় অভ্যন্তরীণ জলসীমা ও রাষ্ট্রীয় জলসীমা, ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিলে বলা হয়েছে, এর একটি বাংলা পাঠ প্রণয়ন করা হবে। সংসদে উত্থাপিত বিলে এই বিধান ছিল না। সংসদীয় কমিটি এই বিধান যুক্ত করেন। যা সংসদ গ্রহণ করেন।
বিলে বলা হয়েছে, জলদস্যুতা, সশস্ত্র চুরি, সমুদ্র সন্ত্রাস করতে গিয়ে কেউ খুন করলে মৃত্যুদণ্ড হবে। আর জলদস্যুতা বা সমুদ্র সন্ত্রাসের শাস্তি হবে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া দস্যুতা করে যা সে লুট করবে, তার জন্য জরিমানা হবে।
রাষ্ট্রীয় জলসীমায় চলাকালে কোনো বিদেশি জাহাজে অপরাধ সংগঠিত হলে অপরাধী গ্রেপ্তার ও তদন্ত পরিচালনায় এ আইন প্রযোজ্য হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের মেরিটাইম অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করা হয়।
পরে ১৯৮২ সালে ‘ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি’ শীর্ষক কনভেনশন জাতিসংঘ গ্রহণ করলে একই বছর ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ তাতে স্বাক্ষর করে।
আগের আইনে সামুদ্রিক দূষণের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান ছিল। বিলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বনিম্ন দুই কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে ওশান গভর্নেন্স, ব্লু ইকোনোমি, মেরিটাইম কো-অপারেশন সংক্রান্ত নির্দেশনামূলক বিধিবিধান সংযোজন করা হয়েছে। বিশেষ করে মেরিন সায়েন্টিফিক রিসার্চের পদ্ধতি ও অনুশাসন সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সমুদ্রে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়, তা ভিন্নমাত্রিক হওয়ায় পৃথক মেরিটাইম ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার বিধান বিলে রাখা হয়েছে। অপরাধ বা দুর্ঘটনা সংক্রান্ত ভিডিও, ছবি, ইলেকট্রনিক রেকর্ডকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করারও সুযোগ থাকছে।
কন্টিনেন্টাল শেলফের সংজ্ঞা ও সীমা ইউএনক্লস-১৯৮২ এবং আন্তর্জাতিক আদালতের মামলার রায় অনুযায়ী বিদ্যমান আইনের সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই অঞ্চলের সেইফটি জোন নির্ধারণ, সাবমেরিন কেবল ও পাইপলাইন স্থাপন সংক্রান্ত বিধানও সংযোজিত হয়েছে।
বিলে ‘ইকোনোমিক জোনের’ পরিবর্তে ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে এবং সকল প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
আগের আইনের ‘কন্টিগিউয়াস জোনের’ সংজ্ঞা ও সীমা ইউএনক্লস-১৯৮২ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধন করা হয়েছে। কন্টিগিউয়াস জোনের ব্যাপ্তি ১৮ থেকে ২৪ মাইল করা হয়েছে।
নদী বন্দর / পিকে