আলোচনা করে মদকে মাদকদ্রব্য থেকে আলাদা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।
মদকে মাদকদ্রব্য আইনে শ্রেণিভুক্ত করা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- এ মর্মে জানতে চেয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ সচিব এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মদ, অ্যালকোহলকে মাদক বলে চিহ্নিত করা আছে। যেহেতু কোর্ট থেকে নির্দেশনা এসেছে, এখন এটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো। লিকারকে কীভাবে আলাদাভাবে দেখা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে জানাবো। আবার বসে ঠিক করবো।’
মাদক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মাদকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে।’
সভায় মাদকদ্রব্য নিরাময় কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে ‘চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্র’ করা প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কারণ মাদকসেবীরা ৭০ শতাংশের ওপরে সুস্থ হয় না। আবার ব্যাক করে। চিকিৎসাকেন্দ্র শব্দটি সঙ্গে থাকলে উপযুক্ত হবে। কারণ শতভাগ নিরাময় করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘চাকরিতে নিয়োগের সময় ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতো এটা আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। অনেক চাকরিজীবী বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীতে যারা চাকরি করছেন, যারা মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করছেন, তাদের মধ্যে যাকে মাদকাসক্ত বা মাদকের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করছি এবং ডোপটেস্টে যারা শনাক্ত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন যত নিয়োগ হচ্ছে সেখানে ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।’
‘সরকারি যে কোনো চাকরির জন্য ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়ে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। কাজেই এখন থেকে ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চাচ্ছি যাতে নব প্রজন্ম বিপথগামী না হয়, ভুল পথে না যায়, সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ধীরে ধীরে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
মাদকসেবীদের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে ৪ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মাদক মামলা রয়েছে। এগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেওয়া হবে। সীমান্তে সমন্বিত ব্যবস্থায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ এসেছে। অনলাইনে মাদক বিক্রি শুরু হয়েছে, কঠোরভাবে মনিটরিং করে যারা এর সঙ্গে যুক্ত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাদক মামলা নিষ্পত্তিতে মাদক আইনে ডেডিকেটেড কোর্ট গঠনের কথা বলা হয়েছে। সেটি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জটিলতা এসেছিল। পরে সিদ্ধান্ত হয় প্রত্যেক কোর্টে অগ্রাধিকার দিয়ে মাদকের মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেবেন আইনমন্ত্রী। মাদক আইন পরিবর্তন করা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাদক আমাদের দেশে তৈরি হয় না। ভারত কিংবা মিয়ানমার থেকে আসছে। মাদকের স্বার্গরাজ্য হলো মিয়ানমার। টেকনাফের যতই ওপর যাবেন, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে বান্দরবানের দিকে যতই যাবেন দুর্গম এলাকা। বর্ডার এলাকায় যেতে দুই-তিন দিন লাগবে। আমরা বর্ডার রুট করছি। আমরা মনে করি দুই বছরের মধ্যে বর্ডার রুট করা শেষ হবে। এটা হয়ে গেলে বর্ডার গার্ডরা সীমান্তে গিয়ে পাহারা দিতে পারবেন। অনেকখানি মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।’
‘মিয়ানমার এই সুবিধা নিয়ে সড়ক পথে আবার জঙ্গল দিয়ে চলে আসে। কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করা হয়েছে, আরও শক্তিশালী করা হবে। যাতে করে মাদক আমাদের দেশের যুব সমাজ, সারা বাংলাদেশে যত্রতত্র মাদকের বিস্তার ঘটে যাচ্ছে বলে খবর আসছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে কঠোর থেকে কঠোরতম অবস্থানে না গেলে শতভাগ সফল হবো না।’
টেকনাফের অধিবাসীরা ইয়াবাকে মাদক নয়, ওষুধ মনে করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এদের সচেতন করতে হবে। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। উৎপাদিত সব পণ্য ও চিঠিপত্রে মাদককে না বলুন বাক্যটি লেখা থাকবে।’
নদী বন্দর / এমকে