বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কিছু উঁচু জমির ফসলও ডুবেছে। রবিবার বৃষ্টি মাখা রোদ ছিল। সুনামগঞ্জের তিনটি ও সিলেটের পাঁচ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। সিলেটের কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাটের সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ১৮ মে পর্যন্ত বৃষ্টি হবে। এদিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় শুক্রবার পাহাড় ধসে অপূর্ব পাল (২৭) নামে যুবক নিহত ও তার ভাই পাপ্পু পাল (২২) গুরুতর আহত হন। তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একই দিন জৈন্তায় ঢলের তোড়ে নৌকা ডুবে ছয় জন নিখোঁজ হয়, পাঁচ জনকে উদ্ধার করা হয়।
পরে শনিবার আলমগীর (৩০) নামের এক জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে সিলেট সদর উপজেলার বিভিন্ন পাহাড় টিলায় অন্তত ২৫০ পরিবার ঝুঁকিতে বাস করছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, টিলার নিচে ও নদী তীরে বসবাসকারীদের সরে যেতে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। সিলেটের পানিবন্দি মানুষের জন্য ৭৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
হাওর প্রধান সুনামগঞ্জের রক্তি, গজারিয়া, সুরমা নদীর পানি বেড়ে বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। বিশ্বম্ভরপুরে সলুকাবাদ ইউনিয়নে অবস্থা খারাপ। সেখানে কয়েকটি রাবার ড্রাম উপচে গ্রাম ও ফসল ডুবেছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গির হোসেন ইত্তেফাকে বলেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রাবার ড্রামগুলোকে ২ ফুট নামানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুবা আরো গ্রাম ডুবে যাবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রবিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপত্সীমার ১ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট পয়েন্টে পানি ছিল বিপত্সীমার ১০ দশমিক ৫১ সেন্টিমিটার ওপর। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে রবিবার সকালে বিপত্সীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা শেরপুর পয়েন্টে, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও বাড়ছে।
সিলেটের কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাটের সঙ্গে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঢলের পানিতে জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার মানুষ। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বারহাল, মানিকপুর, কাজলসার ইউপিসহ বিভিন্ন এলাকায় সুরমা কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে ও উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বীজতলা। তলিয়ে গেছে শতাধিক পুকুর ও ফিসারিজ। জকিগঞ্জের প্রধান ডাকঘর, প্রাণিসম্পদ অফিস, স্থলশুল্ক স্টেশন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট জলমগ্ন।
বারহাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানান, নোয়াগ্রাম, উত্তর খিলোগ্রাম, চকবারাকুলি, শরীফাবাদ, শাহগলী বাজার এলাকায় সুরমা ডাইক ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, তলিয়ে গেছে প্রায় ১ হাজার হেক্টর বোরো ধান। বিরশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার জানান, সুপ্রাকান্দি ও বড়চালিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিতে।
জকিগঞ্জের ইউএনও পল্লব হোম দাস জানান, ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে। উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ চৌধুরী বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী ইত্তেফাককে জানান, বাঁধের ৫০০ ফুট ভেঙে পানি ঢুকছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত কদিন থেকে অব্যাহত বর্ষণে সিলেটের জনপদে আবার ঢল নেমেছে।
টিলার পাদদেশে আড়াই শতাধিক পরিবার ঝুঁকিতে
বর্ষণ অব্যাহত থাকলে সিলেটে আরো পাহাড় ও টিলা ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিলেটে ঝুঁকি নিয়ে টিলার পাদদেশে ঘর বানিয়ে বসবাস করছে আড়াই শতাধিক পরিবার। সিলেট সদর উপজেলার আখালিয়া, ব্রাহ্মণশাসন, দুসকি, টিলারগাঁও, খাদিমনগর, খাদিমপাড়া, বালুচর, টুকেরবাজার, পাঠানটুলা, গুয়াবাড়ি, জাহাঙ্গীরনগর, আখালিয়া বড়গুল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা টিলাসহ পাহাড়ের বিভিন্ন স্হানে ঘর বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তারা। সূত্র মতে ১০ হাজার লোকের বসবাস ঐসব টিলার ওপর ও তার পাদদেশে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারী বৃষ্টিপাত হলে সিলেট সদর উপজেলা খাদিম নগর ইউনিয়নের সাহেবের বাজার রামপুর গ্রামে টিলা ধসে বাসিন্দা আব্দুল খালিকের ঘরসহ তিনটি পাকা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
খাদিমনগর ইউনিয়নের ভাটা এলাকায় একটি মাদ্রাসার পেছনে টিলা কাটছেন টিলার মালিক। সেখানেও বেশ কয়েকটি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। টিলা ঘেঁষে পাকা বাসাবাড়িও গড়ে উঠেছে। আখালিয়া বড়গুল এলাকার একটি টিলা দখল করে বেশ কয়েক বছর ধরে বসবাস করে আসছেন অর্ধশতাধিক পরিবার।
নদী বন্দর/এসএফ