টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের চাপে বাঁধ ভেঙে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় বিস্তীর্ণ এলাকার পাকা বোর ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এদিকে বৃষ্টিতে ধান শুকাতে না পারা ও শ্রমিক সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে কলমাকান্দা উপজেলায় ২১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হলেও বৈশাখের শুরুতে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এবার পাহাড়ি ঢলের কারণে ফসল তলিয়ে যাওয়া ও শ্রমিক সংকটের কারণে নতুন করে ক্ষতির সম্মুখীন হলেন কৃষক।
কৃষকরা জানান, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার গোমাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার পোগলা ইউনিয়নের পাঠানপাড়া ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে তলিয়ে গেছে মেদীবিল, টেংলাই, তেলেঙ্গা, বেদুয়া, শালজান, পেটকি, সোনাডুবি, বাসাউড়া হাওরসহ বিভিন্ন এলাকার ৪০০ হেক্টর জমির ফসল। বাঁধ ভাঙার কারণে পার্শ্ববর্তী বারহাট্টা উপজেলার দলপুর, উত্তর-নিশ্চিন্তপুর ও দশদার এলাকার বোরো ধানও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কলমাকান্দার এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তী জানান, জাইকার অর্থায়নে সমিতির মাধ্যমে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রানীগাঁও বাজার-হিরাকান্দা মেইন রোড পর্যন্ত বেড়িবাঁধটি গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বশেষ সংস্কার করা হয়। প্রকল্পভুক্ত সমিতি বিলুপ্ত হয়েছে।
পোগলা ইউপির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, অতিবৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিন দিন ধরে বাঁধের একপাশ গুমাই নদীর পানি বাড়তে থাকে। পরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাঁধের প্রায় ১০০ ফুটের মতো অংশ ভেঙে অভ্যন্তরে পানি ঢুকতে শুরু করে। বাঁধটি অনেক আগে জাইকার অর্থায়নে নির্মিত হয়েছিল। জাইকার অর্থায়নে প্রতিবছর বাঁধটি মেরামত হয়। এবার বরাদ্দ না থাকায় বাঁধ সংস্কারে কোনো কাজ হয়নি। এলাকাবাসীকে নিয়ে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানসমূহ মেরামত করেছি।
জানা যায়, অধিকাংশ কৃষক তাদের জমিতে বিআর-২৯ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান পরিপক্ব হওয়ায় কাটাও শুরু হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টির কারণে মাড়াই করা ধান শুকানো সম্ভব হয়নি। এসব ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে। অঙ্কুর গজানো ধান মানুষ বা পশু-পাখি কারোরই খাওয়ার উপযোগী নয়। ফলে চোখের সামনে ক্ষতি দেখছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, ধানকাটা ও মাড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। সংকটের কারণে মজুরিও বেশি। দৈনিক ভিত্তিতে একজন শ্রমিকের মজুরি এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। অন্যদিকে প্রতিমণ ধান ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকায় বিক্রয় করা যায়।
কৃষক আবুল কালাম বলেন, অনেক কষ্টে জমির ধান কেটে বাড়ি নিয়ে এলেও বৃষ্টির কারণে শুকাতে পারছি না। ভেজা ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে। বাসাউড়া গ্রামের কৃষক নুরল হক জানান, তার দুই একর ধানক্ষেতে পানি জমেছে। শ্রমিক না পাওয়ায় কাটা যাচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারুক আহমেদ বলেন, ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। কৃষকরা এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ জমির ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন।
নদী বন্দর/এসএফ