শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, পণ্যের মান, ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) আপসহীন হতে হবে। এ ব্যাপারে বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
রোববার (২২ মে) বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উদযাপন উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ে বিএসটিআইয়ের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
মেট্রোলজি দিবসের গৃহীত কর্মসূচি নিয়ে আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, এসব উদ্যোগ ক্রেতা-ভোক্তা, উৎপাদক, আমদানিকরক, গবেষক ও বিএসটিআই’র কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও সক্রিয় হতে উৎসাহ জোগাবে।
বিএসটিআইকে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি করা হচ্ছে জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিএসটিআই সক্ষমতার দিক থেকে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। পণ্য পরীক্ষণ এবং ওজন ও পরিমাপের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে বিএসটিআইতে অত্যাধুনিক আরও ৮৯টি ল্যাবরেটরি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
‘বিএসটিআই পণ্যের মান প্রণয়ন, পরীক্ষণ, মান সনদ দেওয়া, সঠিক ওজন ও পরিমাপের নিশ্চয়তা বিধান, ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস সনদ দেওয়ার পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে এরই মধ্যে হালাল সার্টিফিকেট দেওয়া শুরু করেছে। এ কার্যক্রম রপ্তানি বাণিজ্যে বিশাল ভূমিকা রাখবে।’
বিএসটিআই’র সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কের কথা স্মরণ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালে বিএসটিআই আন্তর্জাতিক মান সংস্থার (আইএসও) সদস্যভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিয়াস কমিশনের (সিএসি) ন্যাশনাল কোডেক্স কনট্যাক্ট পয়েন্টের (এনসিসিপি) সদস্যপদ লাভ করে।
‘তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই বিএসটিআইকে একটি শক্তিশালী ও আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। প্রতিষ্ঠানটির টেস্ট রিপোর্ট যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
নূরুল মজিদ বলেন, পণ্য উৎপাদনে পরিমাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। লেনদেনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মান ও সঠিক পরিমাপের পণ্য নিশ্চিত করতে হবে যাতে ভোক্তারা প্রতারিত না হয়।
অনুষ্ঠানে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, পণ্যের মান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন-সরবরাহ এবং ওজনে কারচুপি রোধকল্পে বিএসটিআই নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
‘এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে লাইসেন্সবিহীন, নকল পণ্য উৎপাদনকারী ও পরিমাপে কারচুপিকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সর্তক হচ্ছে এবং জনগণ সঠিক ওজন ও পরিমাপে পণ্য পাচ্ছেন।’
এছাড়া বিএসটিআই’র ল্যাবরেটরিতে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প, ঔষধ শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত ওজন ও পরিমাপক যন্ত্র ক্যালিব্রেশন সেবা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান শিল্প প্রতিমন্ত্রী।
শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে বিএসটিআই’র কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় আনার জন্য এরই মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিএসটিআই’র মানচিহ্ন ও লাইসেন্সের অনৈতিক ব্যবহার রোধকল্পে ওয়েববেইজড কিউআর কোড সম্বলিত সফটওয়্যার প্রবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার।
‘এর ফলে ভোক্তাসাধারণ মোবাইল ফোনে অ্যাপসের মাধ্যমে পণ্যের অনুকূলে প্রদত্ত বিএসটিআই লাইসেন্স, সার্টিফিকেট ও আমদানি ছাড়পত্রের সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। এছাড়া অ্যাপসটি ব্যবহার করে গ্রাহকরা ওজন ও পরিমাপ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম যেমন: মোড়কজাত পণ্যের নিবন্ধন, ক্যালিব্রেশন সনদ ও ভেরিফিকেশন সনদের তথ্য সহজে যাচাই করতে পারবেন।’
এ সময় পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে ওজন ও পরিমাপে কারচুপি না করতে এবং ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ রক্ষায় সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান শিল্প সচিব।
এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব স্থলবন্দর রয়েছে তার প্রতিটি স্থল বন্দরে বিএসটিআই’র ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হলে আমদানি-রপ্তানি অনেক গতিশীল হবে।
বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রপ্তানির জন্য বিএসটিআই’র সার্টিফিকেট ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যেন গ্রহণ করে, সেজন্য উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য রপ্তানি অনেক বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া মোস্তফা আজাদ দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত করারও প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কর্মকাণ্ডের দায়ভার ব্যবসায়ী সংগঠন নিবে না। বিএসটিআইকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসটিআই’র মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ড. মো. নজরুল আনোয়ার। এ সময় তিনি সংস্থাটির সেবা সম্প্রসারণের জন্য ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়সহ স্থাপনসহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, নতুন নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপন ও বিদ্যমান ল্যবরেটরিসমূহের সম্প্রসারণ, মানচিহ্ন নকল প্রতিরোধে অনলাইন কিউআর কোড সম্বলিত লাইসেন্স বা সার্টিফিকেট দেওয়া, স্বর্ণের বিশুদ্ধতা যাচাইপূর্বক সনদ দেওয়াসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, শিল্প কারখানা বৃদ্ধি ও বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় পদার্থ, রসায়ন ও মেট্রোলজি ল্যাব আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিএসটিআই’র সেবাকে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের আওতায় আনার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিএসটিআই’র কাউন্সিলের সদস্য, মান প্রণয়নকারী বিশেষজ্ঞ, শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, স্টকহোল্ডার ও সাংবাদিকরা।
নদী বন্দর/এসএফ