পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে বোরো ধান কাটা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। এক হাজার টাকার বিনিময়েও মিলছেনা কৃষি-শ্রমিক। মাঠেই নষ্ট হচ্ছে ধান।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গুমানী ও চিকনাই নদী হয়ে পানি ঢুকেছে চলনবিলে। পানিতে চাটমোহর উপজেলার বিল এলাকার পাঁচশ বিঘা জমির পাকা ইরি-বোরো ধান ডুবে গেছে। এতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিস বলছে গত দুই দিনে ৫/৬ হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান বিনষ্ট হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে বড়াল, গুমানী, টিকনাই নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পানি থেকে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে নদী ও বিলে বন্যার পানি ঢুকে উঠতি পাকা ধান ডুবে যায়। সারা বছরের খাওয়ার ধান ডুবে যাওয়ায় এ এলাকার কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। ধানের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধান কাটার ভরা মওসুমে চড়া মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। এতে মাঠেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ধান।
শ্রমিকের অভাবে নিজেরাই পানিতে ডুবে থাকা ধান কেটে তোলার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। পলিথিনের নৌকা বানিয়ে ধান কেটে বিলের কিনারায় নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। সময় মতো ঘরে তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। উপজেলার খলিশাগাড়ি বিল, ডিকশি বিল, আফরার বিল, হান্ডিয়াল দরাপপুর বিলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,মাঠের পর মাঠ সোনালী ধান। পানিতেই ধান কাটছে কৃষক ও শ্রমিক। ধান ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও কৃষাণীরা।
ছাইকোলার কৃষক নজরুল ইসলাম, মতিউর রহমানসহ অন্যরা বলেন, মাঠের অধিকাংশ ধান পেকে গেলেও শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে যাচ্ছে পাকা ধান। এক হাজার টাকা মজুরি দিয়েও মিলছে না একজন শ্রমিক। অনেকেই জমির ধান কেটে অর্ধেক ধান শ্রমিককে দিচ্ছেন। যাতে আবাদকৃদ ধান ঘরে তোলা যায়।
কৃষকরা জানান, উজানের ঢলের কারণে নদী ও বিলের পানি বেড়েই চলছে। এর ওপর ঝড়, বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় ধানের ক্ষতি হচ্ছে। চোখের সামনে পাকা ও আধাপাকা ধান পানিতে ডুবে ফসলহানী ঘটছে। ধানকাটা শ্রমিকের অভাবে তাদের দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
ধানকাটা শ্রমিকরা জানান, সব জিনিসের দাম বেশি, তাই মজুরিও বেশি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। মজুরি বেশি না নিলে সংসার চলবে কি করে।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ জানান, চাটমোহরে এবার প্রায় সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে পাকা-আধাপাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক। পানিতে ধানের জমি তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। কৃষিশ্রমিকের চরম সংকট চলছে। বিলে বন্যার পানি ঢুকে ওই এলাকার পাঁচশ বিঘা জমির ধান ডুবেছে বলে খবর পেয়েছি। ৫ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নদী বন্দর/এসএফ