মাগুরার লিচু বছরের পর বছর ধরে ফলপ্রেমীদের তৃপ্তি মিটিয়ে আসছে। এ জেলার লিচুর খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর মাগুরায় লিচুর বাম্পার ফলন ও ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। লিচু সব বয়সীদের মুখরোচক ফল হওয়ায় বিষমুক্ত লিচু সরবরাহে আশা জাগাচ্ছেন মাগুরার চাষিরা।
মাগুরায় লিচু চাষে সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় বিস্তৃর্ণ অঞ্চলজুড়ে শতশত লিচু বাগান করা হয়েছে। এসব লিচু বাগান দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। জেলার সদর উপজেলার হাজরাপুর, ইছাখাদা, মির্জাপুর, হাজিপুর, মিঠাপুর, নড়িহাটি, শিবরামপুর ও শ্রীপুর উপজেলার প্রায় ৪০ গ্রামে হচ্ছে লিচু চাষ। আকারে বড় আর সুস্বাদু হওয়ায় দেশজুড়ে এই লিচুর চাহিদা রয়েছে।
লিচু পাকতে শুরু করায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কিনতে আসছেন পাইকাররা। এবছর প্রতি হাজার দেশি লিচু ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা এবং মোজাফ্ফরি ও বোম্বাই ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা দরে বাগান থেকে পাইকাররা কিনছেন। লিচুর ব্যাপক ফলন হলেও সার কীটনাশক থেকে শুরু করে গাছ থেকে লিচু সংগ্রহ করে পাইকাররা ট্রাক বোঝাই করা পর্যন্ত শ্রমিক খরচ প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবার জেলায় ৬৩৯ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর ফলন হয়েছে আশানুরূপ। জেলায় হাজরাপুরী, মোজাফ্ফরী, বোম্বায়, চায়না-৩ সহ বিভিন্ন জাতের লিচুর এবার ভালো ফলন হয়েছে । তবে বাজারে গুঞ্জন আছে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা অপরিপক্ক লিচু খেয়ে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে।
যার প্রেক্ষিতে ফুল আসা থেকে শুরু করে ফল ধারণ ও ফল পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত দেখভাল করছে কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে লিচুতে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পর অপেক্ষমান সময় মেনে লিচু বাজারজাত করলে সেই লিচুতে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না, এমন পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় উৎপাদিত লিচু ৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি বিভাগ।
মাগুরা সদরের শিবরামপুরের লিচু চাষি ফেরদৌস আহম্মেদ দিদার জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর তার বাগানে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে সার কীটনাশক বেশি দাম ও চড়া দামে শ্রমিক নেওয়ায় লাভের পরিমাণ কিছুটা কম হচ্ছে।
সদর উপজেলার নড়িহাটির লিচু চাষি ফারুখ আহম্মেদ বাবুল জানান, গাছ থেকে লিচু পাড়ার দশ থেকে বারো দিন আগে লিচুতে কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ করেছি। কারণ লিচুটা যখন বাজারে আসবে তখন বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও এই লিচু খাবে। লিচু খেয়ে তারা যাতে অসুস্থ না হয় সেই বিষয়টি বিবেচনা করেই আমি কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ করি।
ঢাকা থেকে আসা লিচুর পাইকার আলম শেখ জানান, মাগুরায় এবার লিচুর অনেক ভালো ফলন হয়েছে। আর এখানকার লিচুর মানও অনেক ভালো। আশা করছি ঢাকায় নিয়ে ভালো দামে বিক্রি করতে পারব।
লিচু ক্রেতা মীর মেহেদী হাসান রুবেল বলেন, একশত লিচু তিনশত টাকায় কিনেছি। এবার লিচু খুব স্বুসাদু হয়েছে। তবে একটি বিষয়ে আমরা সন্দেহ করছি লিচু কীটনাশকমুক্ত কিনা। আমরা চাষিদের কাছে অনুরোধ করব শিশুদের কথা চিন্তা করে কীটনাশকমুক্ত লিচু উৎপাদন করুন।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, মাগুরা জেলায় এবছর ৬৩৯ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। হাজরাপুরি, মোজাফফরি, চায়না-৩ ও বোম্বাই জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়েছে।
কীটনাশক মিশ্রিত অপরিপক্ক লিচু খেয়ে যাতে মানুষ অসুস্থ না হয় সে বিষয়টি আগে থেকেই চাষিদের পরামর্শ দিয়েছি তারা যাতে গাছ থেকে লিচু পাড়ার অন্তত দশ থেকে বারো দিন আগে কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ করে।
কৃষিতে কীটনাশক ব্যবহারে প্রতিনিয়ত মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এমনটি চিন্তা করে মাগুরার লিচু চাষিরা লিচু বাজারজাত করার পূর্বে কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করে বিষমুক্ত পরিপক্ক লিছু বাজারে আনবে এমনটি প্রত্যাশা লিচুপ্রেমীদের।
নদী বন্দর/এসএফ