সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারার পানি ধীরে ধীরে নামছে। তবে ভাটির বহু এলাকা এখনো জলমগ্ন। যেসব ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমেছে, সেই ঘরগুলোর ভেতরে জমে থাকা কাঁদামাঠি সরাতে তারা এখন ব্যস্ত।
চলমান বন্যায় সিলেটের চার জেলায় দুই সহস্রাধিক বাড়ি-ঘর ও রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাই বিশাল। সরকারিভাবে নিরূপণের কাজ চলছে। অন্যদিকে সিলেটের কৃষকরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে।
এপ্রিলে প্রথম দফায় কাঁচা ধান, দ্বিতীয় দফায় পাকা ধান, সবজি, গম, আউশ বীজতলা হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। আউশের বীজতলা করার সুযোগ নেই। চারাও পাওয়া যায় না। যারা বোরো ধান কেটে এনেছেন, তারা ধান শুকাতে পারছেন না। বাড়ির আঙ্গিনা স্যাঁতস্যাঁতে, খলা (চাতাল) ডুবে আছে। তাই বড় রাস্তায় তারা ধান শুকচ্ছেন এলাকাবাসী। এই পরিস্থিতিতে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পুনর্বাসন কর্মসূচি প্রয়োজন। কিন্তু আগামী আমান ও রবি শস্যের আগে এর সুযোগ কম। তবে ৪০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত বোরো চাষিকে এক বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে।
এদিকে এপ্রিল থেকে দুই দফা বন্যায় সিলেটের চার জেলায় কৃষিতে অন্তত ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বেসরকারি সূত্রে জানা গেছে। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ১২০ কোটি টাকার ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।
বন্যায় সিলেট অঞ্চলের ৯১ হাজার কৃষক বোরো জমি, আউশ, বাদাম ও সবজি ক্ষেত হারিয়ে নিঃস্ব। এপ্রিলে প্রথম দফা বন্যায় কেবল সুনামগঞ্জ ও সিলেটে ৬ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে যায়। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত বোরো চাষিরা প্রথম দফায় কাঁচা ধান পরে দু‘ফায় হাওরের পানিতে ডুবে সারা বছরের খোরাকী হারিয়েছেন। কিন্তু হাওরবাসীরা বলেছেন, ক্ষতির প্রকৃত হিসাব আরও বেশি।
ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে
বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে পড়েছেন সিলেটের বন্যা কবলিত মানুষজন। ডায়রিয়ার প্রকোপে গত ১১ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত সিলেটে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬৯ জন। এর মধ্যে শুধু মঙ্গলবারই আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগ সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার।
এর আগে রবিবার পর্যন্ত সিলেটে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ১১৪ জন। দুদিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৫ জনে।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন, গ্রাম এলাকায় পানি নেমে গেলেও সিসিক এলাকায় বিভিন্ন স্থানে ময়লাযুক্ত আবদ্ধ পানি জমা হয়ে আছে। তাই নগরীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ছাড়াও মাঝ বয়সীরাও রয়েছেন। বন্যায় এ পর্যন্ত চর্মরোগে মাত্র ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
সিসিক-এর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, মহানগরী এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ রোধে মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। মঙ্গলবারও দুটি হেলথ ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়। তিনি বলেন, বন্যায় অনেক টিউবওয়েল ডুবে যায়। আবার অনেকক্ষেত্রে সাপ্লাইয়ের পানিও হয়তো দূষিত হয়ে পড়েছে। তাই বন্যা কবলিতদের সপ্তাহ খানেক সতর্কতার সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
জকিগঞ্জে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ছড়াচ্ছে জ্বর, আমাশয়, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফয়সাল জানান, বানভাসি মানুষের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০০ টন চালের চাহিদার বিপরীতে ৬২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ১ লাখ টাকা ও ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়।
নদী বন্দর/এসএফ