রায়গঞ্জে প্রায় ৫ হাজার বিঘা কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রোপাবোরো ধান পচে নষ্ট হয়েছে। যদি জলাবদ্ধতার নিরসন না হয়, তবে আসন্ন মৌসুমে পাট, আউশ ও আমন ধান চাষ করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করেছেন এলাকার বোরো চাষে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ধামাইনগর ইউনিয়নে পানি নিষ্কাশন নালা বন্ধ করে একটি কারখানা স্থাপন, কিছু পুকুর খনন ও কয়েকটি কালভার্টের উজানে স্থাপনা নির্মাণ করায় ওই ইউনিয়নের চান্দের পাইকড়া, বাকাই, ক্ষিরিতলা, শিবপুর, মহিষাচাপড়, বড়াইল, দেবীপুর উত্তর ফরিদপুর ও বিনোদবাড়ি মৌজার প্রায় ৪৫০ বিঘা জমিতে পানি জমে রয়েছে।
ইউনিয়নের বিনোদবাড়ি গ্রামের কৃষক মণিলাল মাহাতো, শিবপুর গ্রামের আক্কাস আলী ও গোলাম মোস্তফা বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে বোরো চাষে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। অধিকাংশ জমিতে পাট, আঊশ ও আমন ধান আবাদ করা সম্ভব হবে না। একইভাবে হতাশা ব্যক্ত করলেন সোনাখাড়া, ধুবিল, ঘুরকা, চান্দাইকোনা, ধানগড়া, নলকা, পাঙ্গাসী ও ব্রহ্মগ্রাছার কৃষক যখাক্রমে রামকৃষ্ণ গুন, ছানোয়ার হোসেন, সেলায়মান আলী, কামরুজ্জামান রাজু, আব্দুল্লাহ, আব্দুস ছালাম, দীপক চক্রবর্তী, আব্দুস সাত্তার, আশরাফ আলী ও রফিকুল ইসলাম।
সোনাখাড়া ইউনিয়নে ব্যাপকহারে পুকুর খনন করার কারণে পানি নিষ্কাশন নালা বন্ধ হওয়ায় ওই ইউনিয়নের কলিয়া, গোপালপুর, শ্রীরামপুর ও সোনাখাড়া মৌজায় ৩০০ বিঘা জমি জলাবদ্ধ হয়েছে। একই কারণে ধুবিল ইউনিয়নে দাদপুর, মালতীনগর, গোপিনাথপুর মৌজায় ৩৩৮ বিঘা জমি পানির তলে রয়েছে। একই কারণে ঘুরকা ইউনিয়নে শ্যামনাই, বাসুদেবকোল দক্ষিণপাড়া, পিরানের পাড়া, শৈলাবিল জগন্নাথপুর, জঞ্জালীপাড়া, গাড়াক্ষেত পুরানপাড়ায় ৪১৩ বিঘা জমি জলমগ্ন রয়েছে।
হাটিকুমরুল (সিরাজগঞ্জ রোড়) বগুড়া মহাসড়কে ফোরলেনের কাজের জন্য রায়গঞ্জের গদাইপুর (জোড়পুল) নামক স্থানে ব্রিজ বন্ধ করে দেওয়ায় চান্দাইকোনা ইউনিয়নের কোদলাদিগর, সিমলা, তবারীপাড়া, দাথিয়া বেণীমাধব, দাথিয়া দিগর এলাকায় প্রায় ১ হাজার বিঘা জমি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। ধানগড়া ইউনিয়নে রায়গঞ্জ-লাহোর সড়কে নিম্নাঞ্চলে কোনো সেতু না থাকায় ২৬২ বিঘা জমি জলমগ্ন হয়ে রয়েছে।
নলকা ইউনিয়নে পানি নিষ্কাশন নালার মুখে বাঁধ দিয়ে চরফরিদপুর আদর্শগ্রাম (গুচ্ছগ্রাম) নির্মাণ করার কারণে দাদপুর দাসপাড়া, পূর্ব ফরিদপুর মৌজায় ৩০০ বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পাঙ্গাসী ইউনিয়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রামের শফিকের বাড়ির পাশে খাল বন্ধ করায় ওই ইউনিয়নের দুবলাগাড়ি বিল, পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের পূর্ব, পাঙ্গাসী বাজারের নাহিদ সুপার মার্কেটের দক্ষিণপাশ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মল্লিক বাড়ির পশ্চিম এলাকায় মোট ১ হাজার ৫০ বিঘা জমি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে।
ধানগড়া-সিরাজগঞ্জ সড়কে কালিয়া বিলের ব্রিজ থেকে পার্শ্ববর্তী ইটভাটা পর্যন্ত নয়ন ঝুলি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে কালিয়াবিল এলাকার ১ হাজার বিঘা জমি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। রায়গঞ্জ পৌর এলাকার মাঠে সেতুবিহীন রাস্তা নির্মাণ করার কারণে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ইউএনও মহোদয় জলাবদ্ধ বেশ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করেছেন। জলাবদ্ধতার নিরসন না হলে উপজেলার বেশ কয়েকটি মাঠে নিয়মিত চাষাবাদ সম্ভব হবে না। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমি একাধিকবার অবহিত করেছি।
নদী বন্দর/এসএফ