পুরনো দুটি হত্যাকাণ্ড আর এজিবি কলোনিতে দলীয় আধিপত্য বিস্তার ঘিরে বিরোধের জের ধরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথা রিমান্ডে স্বীকার করেছেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা। ওমান থেকে ফিরিয়ে আনার পর আদালতের নির্দেশে তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গতকাল রবিবার মুসাকে দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে জানিয়ে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদে আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যার নেপথ্যের আদ্যোপান্তসহ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন মুসা। এ বিষয়ে তাঁর কাছ থেকে আরো তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।
সেই সঙ্গে মুসার কথা মেলাতে প্রথমে গ্রেপ্তারকৃত আসামি মাসুম ওরফে আকাশকে রিমান্ডে এনে তাঁর সঙ্গে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আগে গ্রেপ্তার হওয়া ইয়াসির আরাফাত সৈকত ও সিকদার আকাশকে ফের রিমান্ডে এনে মুসার মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে ডিবি সূত্র জানায়, রিমান্ডে মুসা দাবি করছেন, চার বছর আগে মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকায় বোচা বাবু নামের একজন খুন হন। ওই ঘটনায় তাঁকে ছাড়াও সালেহ ও কাইলা পলাশসহ আরো বেশ কয়েজনকে আসামি করা হয়। তাঁরা সবাই ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলা তদন্তের শুরুতেই টিপু নিহত বোচা বাবুর পক্ষে অবস্থান নেন। এমনকি বোচা বাবুর পরিবারকে মামলা চালানোর খরচও দেন।
টিপুর নির্দেশেই বোচা বাবু হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয় জানিয়ে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মুসা আরো দাবি করেছেন, মামলাটি বর্তমানে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রয়েছে। এই মামলায় প্রতি মাসে তাঁকে তিনবার হাজিরা দিতে হতো। এতে প্রতি হাজিরায় তাঁকে ২৫ হাজার করে মাসে ৭৫ হাজার টাকা শুধু তাঁর উকিলকেই দিতে হতো। মামলা চালাতে আরো আনুষঙ্গিক খরচ ছিল তাঁর।
সব মিলিয়ে মাসে প্রায় এক লাখ টাকা মামলার পেছনে খরচ করতে হতো। এতে তিনি একসময় অধৈর্য হয়ে চরম বিরক্ত হয়ে পড়েন। মামলার বাদী বোচা বাবুর বাবার সঙ্গে বারবার দেখা করে বিষয়টি মীমাংসার মাধ্যমে সুরাহার কথা বলেন। টিপুকেও এই মামলার নেপথ্যে না থাকতে অনুরোধ জানান। কিন্তু কোনো কিছুতেই টিপু কথা শুনছিলেন না।
এ নিয়ে মতিঝিল এলাকায় টিপুর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ এলাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবশালীদের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন দাবি করে মুসা বলেন, তাঁরা সবাই মতিঝিল এলাকায় টিপুর একক রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে বিরক্ত ছিলেন। তাঁরা টিপুকে হত্যা পরিকল্পনায় পেছন থেকে উসকানি দিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এরপর তিনি বন্ধু শামীমের সঙ্গে টিপু হত্যার বিষয়ে কথা বলেন।
মুসা রিমান্ডে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে আরো বলেন, টিপুকে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে তিনি বন্ধু মোল্লা শামীমকে দায়িত্ব দেন। এরপর শামীম ‘শ্যুটার’ আকাশকে ঠিক করেন। পরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁর পকিল্পনাতেই টিপুকে হত্যা করা হয়।
নদী বন্দর/এসএফ