1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
নেত্রকোনায় ঠিকানা হারিয়েছে ৬ শতাধিক পরিবার - Nadibandar.com
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২০ অপরাহ্ন
নেত্রকোনা প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২
  • ১১১ বার পঠিত

জেলার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের মৌ গ্রামের বজলু মিয়া। আধাপাকা বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে। বড় মেয়েটি অন্ধ। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ বানের পানি! বজলু মিয়া ঘুম থেকে উঠে সবাইকে নিয়ে সাঁতরে গিয়ে আশ্রয় নেন অন্যের উঁচু বাড়িতে। কয়েক ঘণ্টা পর সকালে বের হয়ে আর বাড়িঘর দেখেননি। তিন কাঠা জমির মধ্যে দুটি ঘর ছিল তার! এখন ঘর কিংবা বাড়ির চিহ্ন কোনোটাই নেই।

শুক্রবার (২৪ জুন) বিকেলে গিয়ে দেয়া যায়, কয়েকটি ইটের টুকরোয় বসে আছেন তিনি। জানতে চাইলে নির্বাক তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ!

তারপর বলেন, ‘ঘরবাড়ি,গাছপালা, জমি কিছুই নেই! কোথায় গিয়ে উঠবেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে? কি খাওয়াবেন তাদেরকে? বলেই কান্না শুরু করেন তিনি।

শুধু বজলু মিয়াই নন, তার মতো বাড়িঘর হারিয়েছে সীমান্তের দুই উপজেলার ৬ শতাধিক পরিবার। জেলার কলমাকান্দা উপজেলা সীমান্তের রংছাতি ইউনিয়নের ধারাপাড়া গ্রামের ৬৮ বছর বয়সী প্রভাতী হাজংকে পাহাড়ি ঢলে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এক কিলোমিটার দূরে। একপর্যায়ে ঝুঁলে থাকা একটি বাঁশঝাড়ের বাঁশ ধরে টানা ১২ ঘণ্টা ঝুলে থেকে বেঁচে যান প্রভাতি হাজং। একইভাবে বেঁচে যান তার স্বামীসহ ওই পরিবারের আরও চার সদস্য।

বেঁচে যাওয়া অন্য চারজন হলেন, তার স্বামী যোগেন্দ্র, ছেলে বিপ্লব হাজং, ছেলের বউ ঝটিকা হাজং ও দুই বছর বয়সী নাতনি শ্রদ্ধামণি হাজং। তাদের বাড়ি ভারতের মেঘালয় সীমান্তের খুব কাছাকাছি।

প্রভাতী হাজং জানান, বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ১টার দিকে হঠাৎ ঘরে পানি আসার শব্দে জেগে ওঠেন। দেখতে পান মুহূর্তের মধ্যে ঘর ভরে গেছে পানিতে। পানির তোড়ে ঘরের বেড়া ভেসে গেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢলের পানি মাড়িয়ে কিছুটা দূরে রামনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন। ওদিকে বিদ্যালয়ের কাছাকাছি থাকা সেতুর অ্যাপ্রোচের মাটি পানির তোড়ে সরে যাচ্ছিল। সেখানে পা দিতেই অথৈ পানির স্রোতে ভেসে যান সবাই। এরপর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন পরিবারের একেকজন।

jagonews24

প্রভাতীর স্বামী যোগেন্দ্র হাজং একটি বাঁশের খুঁটি ধরে এবং তার ছেলে বিপ্লব হাজং ধারাপাড়া সেতুর কাছে একটি গাছ জড়িয়ে ধরে প্রাণে রক্ষা পান। এ সময় একটি বাঁশঝাড় থেকে পানির ওপর ঝুলে থাকা একটি বাঁশের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে তাতে ধরে ফেলেন তিনি। বাঁশঝাড়টিও ছিল পানিতে নিমজ্জিত। এ অবস্থায়ই পরদিন দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওই বাঁশ ধরে ঝুলে ছিলেন প্রভাতী হাজং।

‘আদিবাসী কমিউনিটি’র নেতা ও বিরিশিরি কালচারাল একাডেমির পরিচালক সূজন হাজং বলেন, এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সীমান্তের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির লোকজনের। তাদের বাড়িঘর চলে গেছে। জমি নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের সম্প্রদায়ের অন্তত বিশ হাজার মানুষ বসবাস করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর পরিদর্শন করে দ্রুত তাদের ঘরবাড়ি সংস্কার করার দাবি জানাই।

দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব উল আহসান বলেন, উপজেলার অন্তত দেড় থেকে দুইশো বাড়িঘর ভেঙে গেছে। পথঘাটের ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করছি। রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপণের কাজ চলছে। ক্ষতির তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম বলেন, উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নসহ কয়েকটি গ্রামে সাড়ে চারশো ঘরবাড়ির তালিকা করা হয়েছে। আরো খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাসপাতাল যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই হাজার হাজার বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বেশির ভাগ বাড়িঘরে এখনো বন্যার পানি। পানি কমলেও তারা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবারের পাশাপাশি খিচুড়ি রান্না করে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সার্বক্ষণিক তাদেরকে নজরে রাখা হচ্ছে।

নেত্রকোনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত জানিয়েছেন, জেলার ছোটবড় সবগুলো নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করছে। তবে উব্দাখালি নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ও ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ত্রাণের কোনো সংকট নেই। ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এই দুর্যোগে সরকারের পাশাপাশি এলাকার বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। যে যেখানে সমস্যায় আছে তাকে সহযোগিতা করুন অথবা তার সংবাদ প্রশাসনকে জানান।

নদী বন্দর/এসএফ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com