বিশ্বের ১০ শতাংশ গম একাই সরবরাহ করে ইউক্রেন, ভুট্টার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ১৬ শতাংশ এবং সূর্যমুখী তেলে প্রায় অর্ধেক। তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে এসব পণ্য সীমান্তের বাইরে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতি মাসে ৬০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করতো ইউক্রেন, যার বেশিরভাগই যেতো কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে। তবে রুশ নৌবাহিনীর অবরোধ এবং জলসীমায় ইউক্রেনীয়দের প্রতিরক্ষামূলক মাইন স্থাপনের কারণে সামুদ্রিক বন্দরগুলো দিয়ে তাদের শস্য রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
রেল, সড়ক ও নদীপথে প্রতিমাসে ২০ লাখ টন শস্য রপ্তানির সক্ষমতা রয়েছে ইউক্রেনের। ফলে দেশটিতে শস্যের মজুত বেড়েই চলেছে এবং তারচেয়ে আশঙ্কার কথা, এই পরিস্থিতি দিনদিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
ইউক্রেনে চলতি মৌসুমে চাষ করা গম এরই মধ্যে সোনালী রঙ ধারণ করেছে। অথচ দেশটির এক-পঞ্চমাংশ গুদাম হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত অথবা রুশ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে রয়েছে। ইউক্রেনের উপ-কৃষিমন্ত্রী তারাস ভিসোটস্কি জানিয়েছেন, দেশটিতে এখনই গত মৌসুমের অন্তত দুই কোটি টন শস্য মজুত হয়ে রয়েছে। তাহলে নতুন ফসল উঠলে কী করবেন কৃষকরা? কোথায় রাখবেন সেগুলো?
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় কৃষকরা এরই মধ্যে শীত মৌসুমের ফসল চাষ শুরু করেছেন, অন্য অঞ্চলগুলোতেও তা শুরু হবে শিগগির। যদিও এ বছর দেশটিতে শস্য উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তারপরও ইউক্রেনের গ্রেইন অ্যাসোসিয়েশনের ধারণা, তাদের বার্ষিক ভুট্টা উৎপাদন ২ কোটি ৬০ লাখ টন, গম ১ কোটি ৯০ লাখ টন, বার্লি ৭০ লাখ টন এবং তেলবীজ উৎপাদন ১ কোটি ৩০ লাখ টন হতে পারে।
পোল্যান্ড বা রোমানিয়ার ভেতর দিয়ে বাড়তি খরচে রপ্তানি করার চেয়ে ইউক্রেনের কিছু কৃষক শস্য মজুতেই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সরকারের আশঙ্কা, চলতি বছর এক থেকে দেড় কোটি টন শস্য মজুতের জায়গা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে পারে ইউক্রেন। তবে গ্রেইন অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এর পরিমাণ আড়াই কোটি টন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
শস্য ঠিকভাবে রাখা না হলে পচে যাওয়া অথবা চুরির ভয় রয়েছে। এই সমস্যা এড়াতে ইউক্রেনীয় কৃষকরা সাইলোর (উন্নত মজুতকরণ স্থান) নিশ্চয়তা বা বিশাল পলিথিন জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। দেশটির সরকার ভ্রাম্যমান গুদাম কেনার আদেশ দিয়েছে, যা ক্ষেতের মতো যেকোনো জায়গায় বসানো যাবে এবং ফসলকে পোকামাকড় ও বৃষ্টিপাতের হাত থেকে রক্ষা করবে।
আবার ক্ষুদ্র কৃষকরা সাধারণ গুদাম ভাড়া নিতে চুক্তি করছেন। তবে এ ধরনের গুদামে অনেক সময় সরকারি অনুমোদন থাকে না, ড্রাইয়িং মেশিন সুবিধাও অপর্যাপ্ত। এর ফলে সেখানে রাখা শস্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। শীতে ভুট্টা হয়তো মাঠেই ফেলে রাখা যায়, তবে তাতে মান কমে যাওয়ার ভয় রয়েছে।
ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা এরই মধ্যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত ১৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে পোল্যান্ড সীমান্তে অস্থায়ী সাইলো নির্মাণ করা হবে। এটি ইউক্রেনীয় কৃষকদের কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। তবে ভিসোটস্কির মতে, এসব শস্য সীমান্ত পার করানোই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
নদী বন্দর/এসএফ