পাকিস্তানের মধ্য-পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিতে অন্তত ৬৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একই সময়ে ওই রাজ্যে বৃষ্টিপাতের কারণে আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০০ জন। এর ফলে নিয়ে দেশটিতে গত জুনের শেষের দিকে থেকে এখন পর্যন্ত ভারী বর্ষণের কারণে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৮০ জনে পৌঁছেছে।
পাঞ্জাবে বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ব্যাপক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রাদেশিক সরকার পাঞ্জাবের বিভিন্ন জেলায় প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় মোকাবিলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় কেবল পাঞ্জাব প্রদেশেই ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ৬৩ জন নিহত হয়েছেন। যা চলতি বর্ষা মৌসুমের একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা।
টানা বৃষ্টিতে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি কিছু এলাকায় ভবনধসের ঘটনাও ঘটেছে। দেশটিতে বৃষ্টিপাতের সময় বেশিরভাগ মানুষের প্রাণ গেছে দুর্বল কাঠামোর ঘরের ছাদ ধসে।
বৃষ্টিপাতের কারণে পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে ১৫ জন, ফয়সালাবাদে ৯ জন এবং ওকারা, সাহিওয়াল ও পাকপত্তন শহরে আরও কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
গত জুনের শেষের দিক থেকে শুরু হওয়া বর্ষা মৌসুমে কেবল প্রদেশেই ১০৩ জন নিহত ও ৩৯৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ১২০টির বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত ও ছয়টি গবাদিপশু মারা গেছে।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, গত ২৫ জুন থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ১৮০ জন নিহত ও এক হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর মংলার ঝেলম নদীতে বন্যার উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ওই নদীতে পানির প্রবাহ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আশপাশের ছোট ছোট সব নদীর পানিও আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে পার্শ্ববর্তী জনপদের জন্য নতুন করে বন্যার হুমকি তৈরি হতে পারে।
সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ায় বার্ষিক বর্ষণের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই দেখা যায় মৌসুমী বৃষ্টিপাতের সময়। আর এই মৌসুমী বৃষ্টিপাত ভারতে জুনের প্রথম এবং পাকিস্তানে জুনের শেষের দিকে শুরু হয়। এই বৃষ্টিপাত স্থায়ী হয় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
মৌসুমী বার্ষিক বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং লাখ লাখ কৃষকের জীবিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভারী বর্ষণের সঙ্গে বন্যা, ভূমিধস এবং ভবন ধসের মতো বিপর্যয়ও দেখা যায়।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়াও ক্রমান্বয়ে অধিক উষ্ণ হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছরে আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তন দেখা গেছে। তবে জটিল এই মৌসুমী ব্যবস্থায় বৈশ্বিক উষ্ণতা কীভাবে প্রভাব ফেলছে, সেই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির ২৪ কোটিরও বেশি মানুষ ক্রমবর্ধমান হারে চরম বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
এর আগে, ২০২২ সালে নজিরবিহীন মৌসুমী বন্যায় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। কয়েক দশকের ভয়াবহ এই বন্যায় দেশটিতে ১ হাজার ৭০০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। দেশটির অনেক অঞ্চল এখনও সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। চলতি বছরের মে মাসে দেশটিতে প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে অন্তত ৩২ জন নিহত হন।
সূত্র: রয়টার্স, এএফপি
নদীবন্দর/এএস