1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
বন্যায় ভেসে গেছে পুকুর, ঋণ আতঙ্কে মৎস্যচাষিরা - Nadibandar.com
শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২০ পূর্বাহ্ন
নেত্রকোনা প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২
  • ১১৬ বার পঠিত

নেত্রকোনায় বন্যায় ২৬ হাজার ৪১৭টি পুকুর ও জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে। এতে কপাল পুড়েছে জেলার মৎস্যচাষিদের। তারা বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করায় এখন কিভাবে সেই টাকা শোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ঋণ আতঙ্কে অনেকের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ১০ উপজেলার ৭৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ওই সময় ৩৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে সোয়া লাখ বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫০ জন।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ২৬ হাজার ৪১৭টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে নেত্রকোনা সদরের ১ হাজার ৪৬৮ জন খামারির ৩২৫০টি পুকুরের মাছ, মোহনগঞ্জের ১ হাজার ৭২৩ জনের ২ হাজার ৪০টি পুকুর, বারহাট্টার ১ হাজার ৭২২ জনের ৩ হাজার ৬৮৭টি পুকুর, কেন্দুয়ার ১ হাজার ১৬০ জনের ২ হাজার ২৩৫টি পুকুর, আটপাড়ার ৯৩৫ জনের ১ হাজার ৬৭০টি পুকুর, পূর্বধলার ৬৮৫ জনের ৭৬৪টি পুকুর, মদনের ১ হাজার ৫৫২ জনের ৪ হাজার ২৪৫টি পুকুর, খালিয়াজুরীর ৩৯১ জনের ৪১৪টি পুকুর, কলমাকান্দার ২ হাজার ৩৪০ জনের ৩ হাজার ১১২টি পুকুর, ও দুর্গাপর উপজেলার পাঁচ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

জেলা মৎস্য বিভাগ আরও জানায়, মোট ৩ হাজার ৫৩৮ হেক্টর জমিতে ২৬ হাজার ৪১৭টি পুকুর/জলাশয়ের ১৫ হাজার ৮২৬ জন খামার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ কোটি ৮০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

এদিকে, মৎস্যচাষিরা মাছ ভেসে যাওয়ায় পড়েছেন বিপাকে। খামারিরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন। স্বপ্ন বুনেছিলেন তাদের উৎপাদিত মাছ বিক্রি করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবেন এবং তাদের ঋণ শোধ হবে। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় ভেসে গেছে তাদের স্বপ্নও। বর্তমানে বন্যার পানি নেমে গেলেও এর ক্ষতচিহ্ন নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন মৎস্য চাষিরা। এর মধ্যেই মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ঝুলে আছে ঋণের বোঝা। তারা এখন বুঝে উঠতে পারছেন না কিভাবে এই ঋণ শোধ করবেন।

জেলার বারহাট্টা উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের নিপা এগ্রো ফিশারিজের সত্ত্বাধিকারী মো. রোকনুজ্জামান খান খোকন জানান, তিনি ৭০ কাঠার পুকুরে পাবদা, তেলাপিয়া, শিং, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করেছিলেন। মাছ প্রায় বিক্রির উপযোগীও হয়ে উঠেছিল। বিক্রি শুরু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। আশা করেছিলেন প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ ও পোনা বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু এর আগেই আকস্মিক বন্যায় সব মাছ ভেসে গেছে। পুকুরের চারপাশে কলা ও সবজি চাষ করেছিলেন। সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে, মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন ১২ লাখ টাকা। ভেবেছিলেন মাছ বিক্রি করে ঋণ শোধ করবেন কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। এখন ভেবে পাচ্ছেন না কিভাবে এই ঋণ শোধ করবেন।

মৎস্য খামারি মো. আরিফুর রহমান ও মোখলেছুর রহমান মিলে বাউসি, আসমা ও সাহতা ইউনিয়নে মোট ৩৪ একর পুকুরে পাবদা, গুলশা, তেলাপিয়া, শিং, রুই, কাতলা ও সিলভার মাছের চাষ করেছিলেন। তারা জানান, কিছু কিছু মাছ তারা বিক্রি শুরু করেছিলেন। তবে দুই কোটি টাকার ওপরে মাছ বন্যার কারণে খামার থেকে বেরিয়ে গেছে। তারা এখন প্রায় নিঃস্ব। ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফা ব্যাংক থেকে মাছ চাষের জন্য তারা ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এই ঋণ তারা কবে কিভাবে শোধ করতে পারবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।

বারহাট্টার বাউসি ইউনিয়নের আরেক মৎস্যচাষি মো. ইলিয়াছ তালুকদার বলেন, আমরা এখন ঋণের আতঙ্কে আছি। সব শেষ হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম ঘুরে দাঁড়াবো। সে আশা তো এখন বাদ। কিভাবে কী যে হবে! কৃষি ব্যাংক থেকে ১১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। ব্যক্তি পর্যায়ে অন্য জায়গা থেকেও ঋণ নিয়েছি। মোট ৩০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। বন্যার কারণে সব মাছ পুকুর থেকে বেরিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, পাঁচটি পুকুরে তেলাপিয়া, পাবদা ও গুলশা মাছ চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম বিক্রি করে ঋণ শোধ করে লাভবান হবো। এখন দেখছি, ঋণ শোধ করতে করতেই জীবন পার করতে হবে। ঋণ শোধের আতঙ্কে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না।

ইলিয়াছ তালুকদার আরও বলেন, ব্যাংক যদি বর্তমান পরিস্থিতি আমলে নিয়ে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ দেয় তাহলে খুব ভালো হতো।

জেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর জানিয়েছেন, বন্যার কারণে জেলার ১৫ হাজার ৮২৬ জন মৎস্যচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মোট ২৬ হাজার ৪১৭টি পুকুর ও জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ কোটি ৮০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

নদী বন্দর/এসএফ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com