সুরমা নদীর পানি নামতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। বিশেষ করে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের হেরাখলা গ্রামে নদী ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এতে বিলীন হচ্ছে কৃষি জমি। হুমকিতে রয়েছে গ্রামের ঘরবাড়ি, মসজিদ ও স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন রোধে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে কিছু দিনের মধ্যে গ্রামটি বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, সুরমা তীরবর্তী হেরাখলা একটি বৃহৎ গ্রাম ছিলো। নদী ভাঙনে গ্রামটি এখন দুটি ভাগে বিভক্ত। নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে ঘর বাড়ি ছেড়ে মানুষজন অন্য পাড়ে গিয়ে বসবাস করছেন। ফলে দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়ে হেরাখলা গ্রামটি।
হেরাখলা গ্রামের মুরব্বি মখলিছুর রহমান বলেন, ‘নদী ভাঙন আমাদের অনেককে গৃহহীন করেছে। স্বজনরা আজ একে অন্যকে ছেড়ে দূরে গিয়ে বসবাস করছেন। গ্রামের যে অংশটি এখন বিদ্যমান আছে, সেখানেও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। একটি গ্রাম ভেঙ্গে এখন নদীর দুই প্রান্তে দুটি গ্রামের জন্ম হয়েছে।’
মখলিছুর রহমান নামের অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘গ্রামের একমাত্র মসজিদটির অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। যেটুকু আছে সেখানে নামাজ পড়ার পরিবেশ নেই। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমাদের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। নিঃস্ব হওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। আমি নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’
কান্দিগাও ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘হেরাখলা এলাকায় হঠাৎ করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এলাকার মানুষ অতি দরিদ্র। এই পরিবারগুলোর মাথা গোজার স্থানটুকু বাঁচানো যাচ্ছে না। অতি দ্রুত নদীতে ব্লক বসানো প্রয়োজন। না হয় হেরাখলা গ্রামের শেষ অংশটুকুও সুরমায় বিলীন হয়ে যাবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সামাদ বলেন, ‘কান্দিগাও ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে হেরাখলা গ্রামে। এই গ্রামের বহু ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এখন যেগুলো আছে সেগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। জাতীয় সংসদের স্পিকার প্রয়াত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী , প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের প্রচেষ্টায় পশ্চিম দর্শ এলাকার এক কিলোমিটার নদীতে ব্লক স্থাপন করা হয়। ওই এলাকা রক্ষা পেলেও বাকি এলাকা এখনো ভাঙন কবলিত। দিন দিন ভাঙন বাড়ছে।’
কান্দিগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মনাফ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অনেক গ্রাম সুরমা তীরবতীর্। হেরাখলা ছাড়াও ধনপুর, জাঙ্গাইলসহ আরো গ্রাম রয়েছে যেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই গ্রামগুলো বাঁচতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমন। তিনি, নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন। আপাতত হেরাখলা গ্রাম বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের নজরে এনেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ে একটি ব্যবস্থা হবে।’
পানি উন্নয় উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফখরুল আহমদ বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে আমি হেরাখলা গ্রামের নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন ঠেকাতে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আমি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘নদী ভাঙনের খবর পেয়ে একজন কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করিয়েছি। তাৎক্ষনিকভাবে হয়তো ব্লক বসানো যাবে না। তবে আপদকালীন একটি ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলছে।’
নদী বন্দর/এসএইচ