নিজের বাড়ির পাশে চার শতাংশ জমিতে সুলাইমান প্রথম শুরু করেন খেজুরের চাষ। বর্তমানে এক একর জমিতে কয়েক হাজার খেজুর গাছ ও চারা রয়েছে। ইউটিউব দেখে খেজুর চাষে আগ্রহ আসে তার। তাই ঢাকায় দোকানে কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন দেশে।
দিনাজপুর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন কয়েকটি খেজুরের চারা। শুরু করেন চাষ। বর্তমানে কয়েক হাজার খেজুরের চারা হয়েছে তার বাগানে।
শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ছোটকাচনা গ্রামে বসবাস মো. সুলাইমান খানের। দুই মেয়ে, বাবা-মা নিয়ে ১০ জনের সংসার চলে এই খেজুর চারা বিক্রি করে। তার পিতার নাম দলিল উদ্দিন খান। তার বাগানে আজুয়া, মরিয়ম, বারবি, নাখাল, সুপারি নামের খেজুর চারা রয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি নতুন জাতের খেজুরগাছ করার জন্য চেষ্টা করছেন। তিনি বছরে চারা বিক্রি করে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার আয় করেন বলে জানান। বাগানে আট শ থেকে বিশ হাজার টাকা দামের গাছ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে ছোট-বড় সারি সারি খেজুর চারা। সেখান থেকে দামে ক্রেতাদের কাছে চারা বিক্রি করছেন। বাড়ির পাশেই বিশাল জায়গাজুড়ে খেজুর বাগান। সেখানে কয়েক হাজার খেজুরগাছ ও চারা। গাছ ও চারা পরিচর্যার জন্য কয়েকজন যুবক কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। অল্প অল্প করে এই বাগানটি তৈরি করেছেন সোলায়মান। দূর-দূরান্ত থেকে তার বাগান দেখতে ও চারা কিনতে লোক আসেন। তাদের তিনি পরামর্শ ও নিজে গিয়ে বাগান করে দিয়ে আসেন।
সুলাইমান বলেন, খেজুর বাগান শুরু করার দুই বছর পর একটি গাছে খেজুর আসে। তবে সেগুলো রাখতে পারিনি, ঝরে গেছে। কেন ঝরল তা জানতে আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলি। তারা পরামর্শ দেন, ছোট জায়গায় বেশি গাছ হওয়ায় ফল টেকেনি। পরে আমি বাড়ির পাশের পুকুরটি ভরাট করি। সেই জায়গায় চারা লাগিয়ে দিই। তার পর থেকে কয়েকটি গাছে ফল আসত। এই বছর ৫০টি গাছে গুঁটি এসেছিল। পরিপক্ব না হওয়ায় সেগুলো ছাঁটাই করে দিই। আশা রাখি আগামী বছর ফলন আসবে।
ঘুরতে আসা জিসান মাদবর বলেন, সুলাইমান ভাইয়ের বাগানটি দেখার জন্য আমি এসেছি। আসলে আমাদের দেশে সৌদি আরবের খেজুরের এত বড় একটি বাগান এই মাটিতে হতে পারে তা আমার ধারণা ছিল না। তার বাগানটি দেখে আসলেই আমি মুগ্ধ হয়েছি। এত সুন্দর একটি বাগান কিভাবে সেখানে দাঁড় করিয়েছে তা ভেবে। তার বাগানে কয়েকটি গাছে খেজুর রয়েছে।
স্থানীয় মতিন মিয়া বলেন, সুলাইমান খেজুর বাগান নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে। সে ঢাকা থেকে এসে ছোট একটি খেজুরের বাগান দিয়ে শুরু করে। বর্তমানে তার এক একর জমি বাগানে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া এই এলাকার কয়েকজন যুবক বাগানে কাজ করেন। গত বছর আমি তার কাছ থেকে তিনটি ছোট খেজুরগাছ নিয়েছিলাম। এ বছর সেগুলোতে খেজুর হয়েছে।
সুলাইমান খান বলেন, এ বছর আমি কিছু জমি লিজ নিয়েছি। সেখানে মাল্টা, আপেল, আঙুরসহ বেশ কিছু ফলের বাগান করব। পাশাপাশি সবজির বাগানও করব। বর্তমানে সেখানে পরিচর্যার কাজ চলতেছে। কাজ হয়ে গেলেই আমি শুরু করব।
গোসাইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন বলেন, সরকারিভাবে খেজুরের কোনো প্রকল্প দেশে নেই। আমরা তাকে নিয়ম বা পরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করি। বিশেষ করে কোনো রোগে কখন কী করতে হয় সেই বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের কাছে এখন অনেকেই আসে খেজুর বাগান করার জন্য। আমরা তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকি।
নদী বন্দর/এসএইচ