যমুনা নদীবেষ্টিত সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় জীবনযাত্রায় নৌকার ভূমিকা অনেক। আর এ কারণেই দুর্গম চরাঞ্চলের নাটুয়ারপাড়ায় জমে উঠেছে শত বছরের ভাসমান পাটের হাট। তবে দাম কম হওয়ায় হতাশ চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহের শনি ও বুধবার এ হাট বসে। একের পর এক সারি সারি নৌকায় পাটের কেনাবেচা হয় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আসা-যাওয়া ও বেচাকেনা সব কিছুই চলে ভাসমান নৌকায়। এ বাজার থেকে পাইকাররা পাট কিনে কারখানা মালিকদের কাছে বিক্রি করেন।
এ হাটে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরসহ নৌকায় পার্শ্ববর্তী জামালপুরের সরিষাবাড়ী, মাদারগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট ও শেরপুর থেকে কৃষক ও পাইকাররা নৌকা করে পাট কেনাবেচা করতে আসেন। তবে পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের। তারা জানান, প্রতি বছরই পাট চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এদিকে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের দাবি, মিল মালিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণেই কৃষক পর্যায়ে কমছে পাটের দাম। যদিও কৃষি অধিদপ্তর বলছে, বাজারদর স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত করা হয় অভিযান।
নাটুয়ারপাড়ার কৃষক সোলাইমান হোসেন বলেন, এ বছর সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের মূল্য বাড়লেও পাটের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। প্রতি মণ পাট উৎপাদন করতে আমাদের ২২০০ টাকা খরচ হয়েছে আর বিক্রি করতে হচ্ছে ২৫০০-২৬০০ টাকায়। এ অবস্থায় কীভাবে পাট চাষ করতে আমরা আগ্রহী হবো।
স্থানীয় পাট চাষি মকবুল মিয়া বলেন, বড় বড় মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে পাটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে।
পাটের পাইকার শাহ আলম বলেন, এ হাট থেকেই পাট কিনি। কারণ নৌকায় পাট নামানো ও তোলা অনেক সহজ হয়। প্রতি হাটে ৭০-৮০ মণ পাট কেনা হয়।
হাট ইজারাদার ও নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, এ মৌসুমের তিন মাস মূলত ভাসমান নৌকায় পাট বিক্রি হয়। তারপর শুকনো স্থানে হাট বসে। আর প্রতি হাটে প্রায় তিন থেকে চার হাজার মণ পাট বেচা-কেনা হয়।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, এ উপজেলার পাটের মান বেশ ভালো। যদিও এ বছর বন্যার কারণে পাটের আশানুরূপ ফলন না হলেও বিঘা প্রতি সাত থেকে আট মণ পাট পেয়েছেন কৃষকরা।
নদী বন্দর/এসএইচ