জ্বালানি সংকটের মধ্যেই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন লিজ ট্রাস। গত ৫ অক্টোবর প্রথমবারের মতো বার্মিংহামে কনজারভেটিভ দলের এক সম্মেলনে বক্তব্য দেন তিনি। সে সময় ট্রাস বলেন, আমি বুঝতে পেরেছি এবং আমি শুনেছি। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন সরকার ট্যাক্সের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ছাড় দিতে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। মূলত এই ঘোষণা ব্রিটেনের বাজারকে চাপে ফেলেছে।
এতে ব্রিটিশ সরকারের বন্ডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পুরো বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে অনেকটাই প্ররোচনা দিয়েছে বলা যায়। তবে সম্মেলনে কনজারভেটিভ দলের সংসদ সদস্যরা নীতি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, পরিবর্তনের বিষয়গুলো তারা সামান্যই বুঝতে পেরেছেন।
ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং নীতি পরিবর্তন দিয়েই শুরু করেছেন। আয়করের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ফিরে এসেছেন। এরপর বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে ক্ষতি খুব কমই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। যদি ধনীদের কর বিরতি দেওয়া হতো তাহলে সরকারের ক্ষতি হতো দুই বিলিয়ন পাউন্ড। তবে কর ছাড়ের আওতায় এখনও সরকারকে গুণতে হবে ৪৩ বিলিয়ন পাউন্ড। ট্রাস চলতি সপ্তাহে নিজেই বলেছিলেন, করের সর্বোচ্চ হার বাতিল করা তার পরিকল্পনার মূল অংশ ছিল না। কিন্তু এখন প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কীভাবে বর্তমান কর ছাড় পরিশোধ করবে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেখে মনে হচ্ছে সরকার নিজেও হয়তো এ বিষয়ে পরিষ্কার নয়। ট্রাস ও কোয়ার্টেং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি মধ্যম মেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা পর্যবেক্ষকরা যাচাই করবেন।
সর্বোত্তম পরিস্থিতিতে খরচ কমানো কঠিন হবে। বিভাগীয় বাজেট এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির কারণে চাপা পড়ে গেছে। মূলধন ব্যয় হ্রাস করা একটি প্রবৃদ্ধির পক্ষের সরকারের জন্য একটি উদ্ভট কাজ হবে। কিন্তু কনজারভেটিভ পার্টির বুঝতে না পারার কারণে এটি এখন কঠিন হয়ে উঠেছে। করের সর্বোচ্চ হারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পর বিদ্রোহী টোরি এমপিরা ওয়েলফেয়ারে রিয়াল টার্ম কাটার সম্ভাবনারও বিরোধিতা করার জন্য একত্রিত হচ্ছেন।
এর আগে গত ৫০ বছরের মধ্যে কর কমানোর সবচেয়ে বড় প্যাকেজ উন্মোচন করেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং। ব্রিটেনের অর্থনীতিকে একটি নতুন যুগে স্বাগত জানাতেই এই পরিকল্পনা বলে জানিয়েছিলেন নতুন এই চ্যান্সেলর। শুধু তাই নয় আয়কর ও বাড়ি কেনার ওপর স্ট্যাম্প শুল্ক কাটার পাশাপাশি ব্যবসায়িক করের পরিকল্পিত বৃদ্ধিও বাতিল করা হয় নতুন পরিকল্পনায়।
তাছাড়া যুক্তরাজ্য সরকারের কর কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এই পরিকল্পনা জীবনযাত্রার ব্যয়-সঙ্কটকে আরও বাড়াতে পারে বলেও সতর্ক করেছে তারা।
নদী বন্দর/এসএইচ