২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষেও ব্যাট হাতে ভরাডুবিতে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন শামীম হোসেন পাটওয়ারী। বাংলাদেশ ক্রিকেট যার ব্যাটে ভবিষ্যতের হার্ডহিটার খুঁজছিল সেই শামীম নিজেকে খুঁজছিলেন ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে।
জাতীয় দল থেকে ছিটকে যাওয়ার পর শামীম ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্টেই যেন আলো কেড়ে নিতে পারছিলেন না। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে একটি সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সেই শেষ ছিল এই ক্রিকেটারের জন্য। এবারের বিপিএলেও ব্যাট হাতে ভালো কিছু করতে পারছিলেন না এই ব্যাটসম্যান।
বলার মতো ইনিংস ছিল গ্রুপ পর্বে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে হেরে যাওয়া ম্যাচে ২৪ বলে ৩ চার ও ৪ ছয়ে অপরাজিত ৪৪ রান। সেই ইনিংস সত্ত্বেও ১০ ম্যাচের ৭ ইনিংস থেকে শামীম করতে পেরেছিলেন মোটে ৯০ রান। অবশেষে শামীম ফিরলেন। নিজেকে প্রমাণ করার জন বেছে নিলেন চলতি বিপিএলের প্লে-অফের মঞ্চ।
ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেললেন ক্যারিয়ারসেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস। শামীমের সেই ইনিংসের ওপর ভর করে এলিমিনেটর ম্যাচে সাকিবের বরিশালকে হারিয়ে বিপিএলে টিকে রইল রংপুর। কোয়ালিফায়ারের আগেই বিদায় বলতে বাধ্য হলেন সাকিব আল হাসানরা।
মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এলিমিনেটর ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে টসে হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বরিশাল নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে ১৭০ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শামীমের ক্যারিয়ারসেরা ৭০ রানের ওপর ভর করে ৩ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয় রংপুর।
এলিমিনেটর ম্যাচে মাঠে নামার আগে টানা দুই হার দেখে সাকিব আল হাসানরা। রংপুরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক হারে সাকিবদের বিপিএল যাত্রা শেষ হয় বেশ আগেই।
মিরপুরে এদিন আগে ব্যাটিং করতে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং করিম জানাতের ব্যাটে লড়াইয়ের স্কোর পায় বরিশাল। এদিন ওপেনিং করতে নামা মিরাজ ৪৮ বলে ৯টি চার ও ১টি ছয়ে করেন ৬৯ রান।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ৩৪ রান। করিম জানাত করেন ২৫ বলে ৩৩ রান। শেষ দিকে নেমে ভানুকা রাজাপাকসে করেন ১০ বলে ১টি করে চার-ছয়ে ১৭ রান। দারুণ ফর্মে থাকা সাকিব এদিন ব্যাটিংয়ে নামেননি। রংপুরের পক্ষে দাসুন শানাকা ২৩ রানে ২টি এবং রাকিবুল নেন ১ উইকেট।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারে উইকেট হারায় রংপুর। সাকিব মেডেন উইকেট নিয়ে দারুণ শুরু এনে দেন বরিশালকে। প্রথম তিন ওভার থেকে রংপুর তুলতে পারে ১ উইকেট হারিয়ে ৮ রান।
বরিশালের বিপক্ষে ভালো খেলায় শামীমকে এদিন তিনে পাঠানো হয়। শামীমও নিজের প্রতি রাখা আস্থার প্রতিদান দেন দারুণভাবে। ওপেনার রনি তালুকদারকে নিয়ে ৬১ রানের দারুণ জুটি গড়েন শামীম। রনি ২৯ রান করে ফিরলে ভাঙে জুটিটি।
রনি ফিরলে মাঠে নামেন অধিনায়ক সোহান। ১৮ রান করে আউট হয়ে ফেরেন রংপুরের অধিনায়ক। ব্যাট হাতে এদিন ব্যর্থ ছিলেন আইএল টি-টোয়েন্টি খেলে আসা নিকোলাস পুরান। মাত্র ৫ রান করে ফেরেন তিনিও।
একপাশে উইকেট হারালেও অন্যপ্রান্তে দারুণ খেলতে থাকা শামীম ফিফটি তুলে নেন ৩৬ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছয়ে। যে ইনিংস শামীম টেনে নেন ৭১ রান পর্যন্ত। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি শামীমের সেরা ইনিংস। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল মাত্র ৫২ রান।
শামীম ফিরলে কিছুটা বিপর্যয়ে পড়ে রংপুর। ডোয়াইন ব্রাভো ফেরেন মাত্র ২ রান করে। তবে দাসুন শানাকা ১৫ এবং শেখ মেহেদী ৯ বলে ১৮ রানের ক্যামিও খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
বরিশালের পক্ষে অধিনায়ক সাকিব মাত্র ২৭ রানের বিনিময়ে নেন ২ উইকেট। এ ছাড়াও ২টি করে উইকেট পেয়েছেন সৈয়দ খালেদ এবং কামরুল ইসলাম রাব্বীও। এরমধ্যে খালেদ খরচ করেন ২৩ রান এবং রাব্বী দেন ৩৩ রান।
নদী বন্দর/এসএইচ