কুয়াশার চাদরে ঢাকা পুরো দেশ। সকালে বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলেও মেলেনি সূর্যের দেখা। গত কয়েকদিন ধরে এভাবেই চলে আসছে দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবন। এর মাঝে যেন খানিকটা ব্যতিক্রমতা নিয়েই হাজির হয়েছে ২০ জানুয়ারির সকাল। আজ ঘুম থেকে উঠে অনেকেরই মাথায় আসছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কথা!
কেননা দশ মাসেরও বেশি সময় (৩১৩ দিন)পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। গত বছরের ১১ মার্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিসিরিজের শেষ ম্যাচের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি টাইগারদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঘরের মাঠে স্বাগত জানিয়ে সেই অপেক্ষার প্রহরে ইতি টানতে যাচ্ছে টিম বাংলাদেশ।
এমন নয় যে মাঝের সময়ে দেশে একদমই ক্রিকেট হয়নি। করোনাভাইরাসের লকডাউন তুলে দেয়ার পর মোটামুটি জাতীয় পর্যায়ে দেশের ক্রিকেট শুরু হয়েছে গত ১১ অক্টোবর। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উদ্যোগে আয়োজিত ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে তিন দলে ভাগ হয়ে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৫০ জন জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটার।
এরপর প্রতিযোগিতার আমেজ ফিরিয়ে আনতে আয়োজন করা হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। যেখানে ৫ দলে ছিলেন প্রায় ৯০ জন ক্রিকেটার। এর বাইরে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও চলছে এমপি কাপ অথবা মেয়র কাপ টি-টোয়েন্টি অর্থাৎ করোনা লকডাউনের পর মোটামুটি প্রায় সারা দেশেই ক্রিকেট শুরু হয়ে গেছে।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উত্তেজনা, টান কিংবা গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুর উর্ধ্বে। সেখানে ফিরতেই প্রায় বছরখানেক সময় নিয়ে নিলো বাংলাদেশ। করোনা লকডাউনের সময়ে একের পর এক বাতিল হয়েছে আন্তর্জাতিক সিরিজ, স্থগিত হয়ে গেছে এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর।
সে সব ধকল সামলে গত বছরের জুলাইয়েই পুনরায় শুরু হয়ে যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তিন ম্যাচের টেস্ট খেলতে ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর একে একে শীর্ষ ক্রিকেটীয় দেশগুলোর প্রায় সবাই ফিরেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। কিন্তু সেই মঞ্চে দেখা মেলেনি বাংলাদেশের।
অবশেষে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়েই দৃশ্যপটে হাজির হতে যাচ্ছ টাইগাররা। নতুন অধিনায়ক তামিম ইকবালের নেতৃত্বে ৩১৩ দিন পর মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় বাংলাদেশ নামটি নিয়ে খেলতে নামছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীমরা। সর্বোচ্চ করোনাবিধি মেনে আয়োজিত এ সিরিজটির গুরুত্ব বেড়েছে এটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার লিগের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায়।
গতবছরের মার্চে করোনা লকডাউনের কারণে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। যা পুনরায় শুরু হয়েছে গতবছরের ৮ জুলাই। এরপর থেকে আজকের (২০ জানুয়ারি ২০২১) আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছে ৬৬টি, খেলেছে ১৯টি ভিন্ন ভিন দেশ। কিন্তু সেখানে ছিল না বাংলাদেশের নাম। এবার ২০তম দেশ হিসেবে করোনা লকডাউনের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবে বাংলাদেশ।
লকডাউন তুলে দেয়ার পর আইসিসির নতুন নিয়ম মেনে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছে এখনও পর্যন্ত ৭টি দেশ- ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড ও আরব আমিরাত। অর্থাৎ টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের আগেই ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরছে বাংলাদেশ।
তবে টেস্ট ক্রিকেট বিবেচনায় আনলে এখানে চলে আসবে নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার নামও। ফলে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া বাকি সবাই শুরু করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। অন্যদের চেয়ে প্রায় ছয় মাস পরে হলেও অবশেষে ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক মঞ্চে যাত্রা শুরু করল টাইগাররা।
করোনা সতর্কতার কারণ দেখিয়ে এবারের বাংলাদেশ সফরে আসেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিয়মিত দলের অন্তত এক ডজন খেলোয়াড়। তবু সিরিজটিকে হালকাভাবে নিচ্ছে না দুই দলের কেউই। কেননা ওয়ানডে ক্রিকেটে দুই দলই খেলতে নামছে দীর্ঘ বিরতির পর। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেললেও, করোনা লকডাউনের পর এখনও পর্যন্ত ওয়ানডে খেলা হয়নি ক্যারিবীয়দের।
অভিজ্ঞদের অনুপস্থিতিতে নতুন ও অনভিজ্ঞ ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের লক্ষ্য নিজেদের সামর্থ্য ও পরিচয়ের জানান দেয়া। আর বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ একটাই- দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলার জড়তা কিংবা অনভ্যস্ততা জয় করে বাংলাদেশি ‘ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট’ প্রতিষ্ঠা করা। যা করতে পারলেই ওয়ানডে সুপার লিগে মিলবে দারুণ সূচনা।
নদী বন্দর / পিকে