অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল জানিয়েছেন, করোনার প্রভাবে সরকারি ব্যয় কমেছে। গত অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তুলনায় চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় ১১.৪৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১২.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। মূলত মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কিছুটা কম হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের প্রেক্ষাপটে আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে উত্থাপিত চলতি অর্থ বছরের বাজেটের প্রথম প্রান্তিকের বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সংসদে এই প্রতিবেদন উত্থাপন করেন। সামনের দিনগুলোকে ব্যয় বৃদ্ধির জোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে অর্থ মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য ২০৪১ সালে উপনীত হওয়া। আমাদের লক্ষ্য হলো- ওই সময়ে উন্নত অর্থনীতির দেশে উন্নীত হওয়া। আমরা খুব শিগগিরই অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবো।
প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে সরকারি ব্যয় হয়েছে ৬২ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। যা বাজেটের ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এ সময় ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। সার্বিকভাবে চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে গত অর্থ বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় মোট ব্যয় ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় ২৬ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং পরিচালন ব্যয় ১ দশমিক ২৮ শতাংশ কমেছে।
করোনা মহামারির মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা থেমে নেই উল্লেখ করে প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর মোট পরিমাণ ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। জিডিপি ক্রমাগত হারে বেড়েছে। কোভিড-১৯-এর কারণে কিছুটা শ্লথ হয়েছে। তারপরও এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে আমাদের জিডিপি অনেক ভালো। বর্তমানে জিডিপি ৫.২৪ শতাংশ। মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে, বর্তমানে মাথা পিছু আয় ২০৬৬ মার্কিন ডলার। আমাদের রফতানি আয় ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিপর্যয় হতে ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। কোভিড মোকাবিলায় সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
করোনায় বৈশ্বিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা কিছুটা শ্লথ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ৮ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ৮ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমদানি ব্যয় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ থেকে কমে ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ হয়েছে। বিপরীতে কর রাজস্ব ৪ দশমিক ১১ শতাংশ, প্রবাস আয় ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
তিনি জানান, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিগত অর্থবছরে রফতানি ও আমদানি হ্রাস পেলেও প্রবাস আয়ের প্রবাহ ভাল থাকায় চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৩ হাজার ৫৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্বৃত্ত পরিলক্ষিত হয়েছে, যেখানে বিগত অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবে ৭১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতি ছিল। বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে।
এসব বিবেচনায় বর্তমান অর্থবছরের সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলান-মুখী মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে স্বাভাবিক অর্থাৎ কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ওপর অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। মুদ্রানীতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিতকরণে নগদ জমা হার (CRR), রেপো রেট ও রিভার্স রেপো রেট সংশোধন করে যথাক্রমে ১.০৫ শতাংশ, ৪.৭৫ শতাংশ এবং ৪.০০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সেকেন্ডারি মার্কেট হতে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এবং বিভিন্ন নতুন পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালুর পাশাপাশি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, দেশের উৎপাদন সক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহ পূর্বের ন্যায় নির্বিঘ্ন রাখতে আমরা সক্ষম হবো।
নদী বন্দর / জিকে