এবার ওয়াসার ট্যাপের পানিতে মিলল ক্যানসারসহ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিওর তত্ত্বাবধায়নে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বাসাবাড়িতে সরবরাহকৃত ওয়াসার পানিতে পাওয়া গেছে পিফাস বা পার অ্যান্ড পলিফ্লুরো অ্যালকাইল সাবসটেন্স। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের ব্যবহার্য নানা সামগ্রী থেকে ক্ষতিকর এসব রাসায়নিক ছড়ায় প্রকৃতিতে। পরবর্তীতে যা পানিসহ কয়েকটি মাধ্যমে প্রবেশ করে মানবদেহে। যদিও এই গবেষণাকে উদ্দেশ্যমূলক আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকা ওয়াসা।
পার অ্যান্ড পলিফ্লুরো অ্যালকাইল সাবসটেন্স বা পিফাস। প্রায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশি মানবসৃষ্ট বিষাক্ত রাসায়নিকের সমন্বয়। যার মধ্যে সব থেকে ক্ষতিকর দুই যৌগ হলো পারফ্লুরোঅকটানোয়িক অ্যাসিড বা পিফোয়া এবং পারফ্লুরোঅক্টেন সালফোনিক অ্যাডিস বা পিফস।
এসব তথ্যের মাঝে সব থেকে উদ্বেগের বিষয়টি হচ্ছে, ক্ষতিকর দুই রাসায়নিক যৌগই মিলেছে বাংলাদেশে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট ইএসডিওর তত্ত্বাবধায়নে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় ঢাকার ট্যাপের পানিতে পাওয়া গেছে ক্ষতিকর এই রাসায়নিকের উপস্থিতি।
২০১৯ সালে ঢাকার বনানী, লালমাটিয়া এলাকার বাসাবাড়িতে সরবরাহ ওয়াসার পানি এবং সাভারের পানপাড়া এলাকার পানির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, লালমাটিয়ার পানিতে সর্বোচ্চ ৮ পিপিটি-পার্টস পার ট্রিলিয়ন মাত্রার পিফোয়া পাওয়া গেছে। বনানী ও বনানীর পানির নমুনায় এ মাত্রা যাথাক্রমে ৬.৮ এবং ৫.১৮। অন্যদিকে, পানপাড়া লালমাটিয়া এবং বানানীর পানিতে পিফসের পিপিটি মাত্রা যথাক্রমে ২.৬, ২.৩ এবং ১।
ইএসডিও নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, পানির নমুনাটা যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির পাঠানো হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় পিফোয়া বিপুল পরিমাণে আছে। যেটা বলা হচ্ছে এই কেমিক্যালটা সরাসরি ক্যানসারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। যেটা ট্যাপ ওয়াটারের মধ্যে আছে।
এর আগে ২০১৫ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের উপকূলীয় এলাকার পানি জাপানের ইয়োকোহামা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা করান ঢাবির মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুল্লাহ আল মামুন। কেমিক্যালস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে এমনকি ক্যানসার হতে পারে।
আন্তর্জাতিক নানা গবেষণা বলছে, মানুষের ব্যবহার্য অগ্নিনির্বাপক ফোম, চামড়াজাত নানা পণ্য, ননস্টিকি রান্নাসামগ্রী, শ্যাম্পুসহ নানা প্রসাধনীসামগ্রী থেকে পরিবেশে ছড়ায় ক্ষতিকর এই যৌগ।
অত্যন্ত বিপজ্জনক এই রাসায়নিক মানবদেহের রক্ত থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত প্রভাব ফেলতে পারে। দেখা দিতে পারে ক্যানসারসহ আরো বড় বড় জটিলতা।
এদিকে ইএসডিওর গবেষণাকে উদ্দেশ্যমূলক বললেও নিজেদের পানি পরীক্ষার বিষয়ে কিছু জানায়নি ওয়াসা। অন্যদিকে, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সিন্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর।
যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় এই রাসায়নিকের মাত্রা ৭০ পিপিটিতে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। বাংলাদেশের পানিতে এই মাত্রা কম থাকলেও এখনই পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।
নদী বন্দর / পিকে