ক্যারিবীয় স্পিনার জোমেল ওয়ারিকান প্রথম দিন শেষে বলেছিলেন, তাদের চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশকে ৩০০ রানের মধ্যে বেধে রাখতে। কিন্তু ওয়ারিকান কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। বাংলাদেশ পার করেছে ৪০০ রানের গণ্ডি। শেষ পর্যন্ত সাকিব-মিরাজরা অলআউট হয়েছে ৪৩০ রানে।
মেহেদী হাসান মিরাজ করলেন অনবদ্য সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ১০৩ রান করে তিনি আউট হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইনিংসের যবনিকাপাত ঘটে বাংলাদেশের। মিরাজ ছাড়াও হাফ সেঞ্চুরি করেন সাকিব আল হাসান এবং সাদমান ইসলাম। সাকিব আউট হন ৬৮ রান করে এবং সাদমান করেন ৫৯ রান।
২০১৮ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরাজ খেলেছিলেন অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস। ওটাই ছিল তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি করার স্বপ্ন দেখাটাই যেন বাতুলতা। কিন্তু এবার আট নম্বরে নামলেও সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন মিরাজ। সুযোগ পেয়েছেন মূলতঃ সাকিব আল হাসান এবং নাঈম হাসানের সঙ্গে ভালো দুটি জুটি গড়তে পারার কারণে। তাইজুল ইসলামও বেশ ভালো একটা সঙ্গ দিয়েছিলেন তাকে।
দিনের শুরুতে লিটন দাস আউট হয়ে যাওয়ার পরই মাঠে নামেন মিরাজ। ৬৭ রানের জুটি গড়েন তিনি সাকিবের সঙ্গে। এরপর তাইজুল ইসলামকে নিয়ে গড়েন ৪৬ রানের জুটি। তাইজুল আউট হন ১৮ রান করে। নাঈম হাসানকে নিয়েও অনেক দুরের পথ পাড়ি দেন মিরাজ। গড়েন ৫৭ রানের জুটি।
২৪ রান করে নাঈম আউট হয়ে যাওয়ার পর মিরাজের সেঞ্চুরি হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজকে সঙ্গে নিয়ে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যান মিরাজ। ১০৩ রান করার পর রাকিম কর্নওয়ালের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন মিরাজ। ততক্ষণে বাংলাদেশের রান পৌঁছে গেলো ৪৩০-এ। মোস্তাফিজ অপরাজিত ছিলেন ৩ রানে।
দিনের শুরুতেই উইকেট হারিয়েছিলেন লিটন দাস। ৩৪ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিলেন তিনি। সঙ্গী ছিলেন সাকিব আল হাসান। তার নামের পাশে ছিল ৩৯ রান। দলীয় রান ২৪২। জুটি ৪৯ রানের। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে সাকিব-লিটনের কাছ থেকে আরও বেশি দৃঢ়তার আশায় টিভির সামনে খেলা দেখতে বসেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
কিন্তু যারপরনাই হতাশই হতে হলো বাংলাদেশের দর্শকদের। কারণ নিজের নামের পাশে ৪ এবং দলীয় ইনিংসের সঙ্গে মোট ৬ রান যুক্ত হওয়ার পরই বিদায় নিলেন লিটন দাস।
অর্থ্যাৎ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের সূচনাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকেই শুরু করতে হলো বাংলাদেশকে। বোলার ছিলেন আগের দিনের সফল জোমেল ওয়ারিকান। তার বলে ব্যাকফুটে গিয়ে পয়েন্টের পাশ দিয়ে কাট করতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু পুরোপুরি পরাস্ত হলেন। বল গিয়ে সোজা আঘাত হাতে অফ স্ট্যাম্পে।
লিটন তবুও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, আম্পায়ার চেক করবেন স্ট্যাম্প কি উইকেটরক্ষক ভেঙেছে কি না। কিন্তু সে সম্ভাবনা না দেখে পরে সাজঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। ভেঙে যায় ৫৫ রানের জুটি। লিটন আউট হলেন ৩৮ রান করে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান। এরপর লম্বা বিরতি। প্রায় ১৬ মাস পর আবারও টেস্ট খেলতে নামলেন। স্বাভাবকিভাবেই তার কাছে প্রত্যাশার মাত্রাটা একটু বেশিই। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতেই যেন হাফ সেঞ্চুরিটা করলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি করার পর কিছুটা অধৈর্য হযে ওঠার খেসারত দিতে হলো তাকে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে। ব্যক্তিগত ৬৮ রানের মাথায় ১৪০ কেজি ওজনের ক্যারিবীয় বোলার রাকিম কর্নওয়ালের বলে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের হাতে। অফস্ট্যাম্পের ওপর থাকা বলটি কাট করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে। ব্র্যাথওয়েট অনায়াসেই বলটি তালুবন্দী করে নেন। ক্যারিয়ারে এটা সাকিবের ২৫তম হাফ সেঞ্চুরি।
এর আগে প্রথমদিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পুরো দিনটাই ভুল বোঝাবুঝিতে কাটিয়েছে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত সেট হতে গিয়েও রানআউটে কাটা পড়েন। তামিম বোল্ড হলেন। সাদমান হাফ সেঞ্চুরি করার পর আর টিকতে পারেননি। মুমিনুল এবং মুশফিকের কাছ থেকে আরও বড় ইনিংস আশা করেছিল সবাই। কিন্তু তারা হতাশ করেছিলেন।
শেষ পর্যন্দ দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছিল ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪২ রান। সাদমান করেছিলেন ৫৯ রান। মুশফিক ৩৮, মুমিনুল ২৬ এবং শান্ত করেন ২৫ রান।
নদী বন্দর / এমকে