তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই বা নকশা না থাকার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এ নিয়ে সরকারের নিজেদের মধ্যে শুধু ‘ভাসাভাসা’ আলোচনাই হয়।
আলোচিত এ প্রকল্প নিয়ে একনেকে বা সরকারের মধ্যে কোথাও অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে কি না জানতে চাইলে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “আসলে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে শুধু ভাসাভাসা নীতিগত আলোচনাই হয়। তিস্তা প্রকল্প যে পানি আসে ভারতের সহযোগিতা ছাড়া এটা আসলে কি হবে?”
এ বিষয়ে চীনের আগ্রহ থাকলেও এখন পর্যন্ত সম্ভাব্যতা যাচাই কিংবা কোনো নকশাও নেই বলে তুলে ধরেন তিনি।
রোববার পরিকল্পনা কমিশনের এনএসইতে একনেক সভা পরর্বর্তী ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা।
তিস্তা নদীকে ঘিরে তিস্তা প্রকল্প বিষয়ক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সত্যিকার আমরা যতটুকু পানি পাই সেটার পূর্ণ ব্যবহার কীভাবে করতে পারি? জলাধার কিছু নির্মাণ করা যায় কি না? কিছু পানি আটকে রাখা যায় কি না? এটার পূর্ণাঙ্গ কোনো পরিকল্পনা এখনও তৈরি হয়নি। একটা ভাসাভাসা ধরনের মানে একটা নকশা ধরনের চীনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটাকে ঠিক প্রকল্প বলা যাবে না।
“কাজেই আমরা এখনও নীতিগতভাবে ওই জায়গাতেই আছি যে আসলে একটা প্রকল্প এখানে করা যাবে কি না যেইটুকু পানি আসে সেইটুকুতে কি একটা ভালো প্রকল্প হবে কি না? এবং সেই প্রকল্প যদি হয় তাহলে তখন প্রশ্ন উঠবে চীন নীতিগতভাবে সম্মত সেটা করতে।
”কিন্তু আগে তো প্রকল্পের ফিজিবিলিটি দরকার। আসলে সেই প্রকল্প, সেই আকারে সম্ভব কি না সেটা এখনও যাচাই করা হয়নি। ব্লুপ্রিন্ট আছে কিন্তু ঠিক আসল নকশা নাই।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে মার্চের শেষ সপ্তাহে চার দিনের জন্য চীনে যান।
জলবিদ্যুৎ, বন্যা মোকাবিলা ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন এবং পানিসম্পদ উন্নয়নের মত বিষয়ে পারষ্পরিক সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও চীন ‘একমত হওয়ার’ বিষয়টি যৌথ বিবৃতিতে আসে তখন।
উভয় পক্ষ ইয়ারলুং জাংবো-যমুনা নদীর জলবিদ্যুৎ তথ্য বিনিময়সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমনওইউ) বাস্তবায়নের ব্যাপারেও ইতিবাচক আলোচনা করে বলে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়।
এ সফর নিয়ে বিফ্রিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছিলেন, চীন তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ‘ইতিবাচক’ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা চীনের সঙ্গে পানিসম্পদ নিয়ে দীর্ঘ, বিস্তৃত ও গভীর আলাপ করেছেন। বাংলাদেশের রিভার সিস্টেমকে আমরা কীভাবে সংরক্ষণ করতে পারি, ব্যবহার করতে পারি, এসব বিষয়ে চীন আমাদের জন্য একটা অত্যন্ত বড় দৃষ্টান্ত।
“তারা এসব বিষয়ে পৃথিবীতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। আপনারা তাদের বিভিন্ন বিশাল বিশাল প্রজেক্টগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সহায়তা চেয়েছেন, তারাও সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।”
তিস্তা প্রকল্পের প্রস্তাব চীনের তরফে আগেই দেওয়া হয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারকে। এ নিয়ে সবশেষ চীন সফরে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার ও চীনের কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলার খবরও এসেছিল।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ২০২৪ সালের মধ্য জুলাইয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ প্রকল্প ভারতকে দেওয়ার ইচ্ছার কথাও বলেছিলেন।
নদীবন্দর/জেএস