বিশ্ববাজারে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে সোমবার (২১ এপ্রিল) ৩ হাজার ৪০০ ডলার স্পর্শ করেছে স্বর্ণের দাম। ডলারের দুর্বলতা এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা বাড়ায় নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দেশের বাজারেও লাফিয়ে বাড়তে থাকা স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্স।
এতে বলা হয়েছে, গ্রিনিচ মান সময় (জিএমটি) অনুযায়ী সকাল ১১টা ৪২ মিনিটে স্পট গোল্ডের দাম প্রতি আউন্স বেড়ে ৩ হাজার ৪০১.৪৯ ডলার হয়, যা আগের সেশনে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪০৩.৯০ ডলার স্পর্শ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোল্ড ফিউচারস ২.৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ৪১৩.৯০ ডলার হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্ক আরোপ এবং তার বাণিজ্য নীতির ঘিরে অনিশ্চয়তা বিশ্ববাজারকে কাঁপিয়ে দিয়েছে এবং বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করেছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এছাড়াও, গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আক্রমণ ডলারকে দুর্বল করে দিয়েছে। ডলারের সূচক তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে, যার ফলে বিদেশি ক্রেতাদের জন্য ডলারে মূল্যায়িত সোনা আরও সস্তা হয়ে পড়েছে।
এদিকে চীন সতর্ক করে বলেছে, কোনো দেশ যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করার সময় তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন না করে।
ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেন, ‘রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের অবস্থান নিয়ে চলমান উদ্বেগ স্বর্ণকে সহায়তা দিচ্ছে এবং আমরা মনে করি স্বর্ণের দাম আরও কিছু সময় উচ্চ অবস্থানে থাকবে। শেয়ারবাজারের পতনের মাধ্যমে ঝুঁকি এড়ানোর প্রবণতা স্বর্ণের চাহিদা বাড়াচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।’
বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে ঐতিহ্যগতভাবে বিবেচিত স্বর্ণ একাধিক রেকর্ড ভেঙে ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৭০০ ডলারের বেশি বেড়েছে। কিন্তু ২০০৮ সালে প্রতি আউন্স এক হাজার ডলার থেকে দুই হাজার ডলারে পৌঁছাতে ১২ বছর লেগেছিল।
আইজি মার্কেট বিশেষজ্ঞ ইয়েপ জুন রং বলেন, ‘স্বর্ণের পরবর্তী সম্ভাব্য মাইলফলক হতে পারে ৩ হাজার ৫০০ ডলার। যদিও নিকট ভবিষ্যতের অবস্থান কিছুটা ভিড়ভাট্টা বলে মনে হচ্ছে এবং প্রযুক্তিগত সূচক অনুযায়ী তা অল্প সময়ের জন্য অতিরিক্ত কেনাবেচার পর্যায়ে রয়েছে।’
স্পট সিলভারের দাম ১.২ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স হয়েছে ৩২.৯৮ ডলার, প্লাটিনামের দাম ১.১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭৭.২৫ ডলারে এবং প্যালাডিয়ামের দাম ০.২ শতাংশ কমে ৯৬০.৭০ ডলার হয়েছে।
এদিকে, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) দেশের বাজারে বেড়েছে স্বর্ণের দাম, গড়েছে নতুন রেকর্ড। এক লাফে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৬২৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আবারও বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও তা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নদীবন্দর/জেএস