জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার নিয়ে চলমান অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি প্রতিনিধি দল। রোববার (২৯ জুন) বিকেল ৪টায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে, শনিবারের মতো রোববারও দেশব্যাপী ‘পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালন করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। রাজধানীসহ সব বিভাগীয় ও জেলা শহরের কাস্টমস, কর ও ভ্যাট অফিসগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের ‘রাজস্ব ভবন’ সামনে আন্দোলনকারীদের জড়ো হতে দেখা যায়। যদিও আজ প্রধান ফটকের প্রবেশে কিছুটা শিথিলতা ছিল; পরিচয়পত্র দেখিয়ে অনেক কর্মকর্তা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেছেন। তবে রাজস্ব ভবনের ভেতরে থাকা ‘বটতলায়’ বসে কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে অনেক আন্দোলনকারীকে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা হালকা ছিল। শনিবারের মতো আজও রাজস্ব ভবনের আশপাশে পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে, তবে সংখ্যা কম ছিল বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন। তাদের দাবি, বর্তমান চেয়ারম্যান রাজস্ব খাতে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় এনবিআরের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত উপেক্ষা করছেন। এ ছাড়া আন্দোলন দমন করতে প্রশাসনিকভাবে চাপ ও হয়রানির পথ বেছে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
শনিবার দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আন্দোলন অব্যাহত থাকবে এবং রোববারও ‘শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালন করা হবে। তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত হলেও, তার আগে বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে— এটি তাদের প্রধান ও অনড় শর্ত।
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির কেন্দ্রে রয়েছে— প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত সংস্কার, অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ, এবং অভ্যন্তরীণ আচরণবিধি ও নেতৃত্বের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারপ্রধানের দফতরের নির্দেশনায় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এই বৈঠকে আন্দোলনকারীরা কতটা নমনীয় অবস্থানে যাবেন, কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কী বার্তা দেওয়া হবে, তা নিয়ে রাজস্ব ভবনের ভেতর ও বাইরে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎকণ্ঠা।
রাজস্ব আদায় বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যেই দেশের প্রধান প্রধান কাস্টম হাউজ, যেমন চট্টগ্রাম, বেনাপোল ও ঢাকা কাস্টমস কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, বিঘ্নিত হচ্ছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম এবং থমকে যাচ্ছে বন্দর সংশ্লিষ্ট নানা কর্মকাণ্ড।
নদীবন্দর/জেএস