মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদীয় পদ বাতিলের বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানির জন্য আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন। আদালতে এদিন রিটটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন রিটকারী আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান।
আইনজীবী আওসাফুর বলেন, ‘আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পাপুলের এমপি পদ বাতিলের বিষয়ে রুল শুনানির জন্য আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের ওপর শুনানি হবে।’
এর আগে গত বছরের ২০ আগস্ট লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলকে সংসদ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করে তার সংসদীয় আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। ওইদিন আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান ও মো. সালাহ উদ্দিন।
পাপুলের সংসদ সদস্য পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিটটি করেছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া।
ওই রিটে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক ও সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে বিবাদী করা হয়।
আইনজীবী জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নির্বাচনী হলফনামায় তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি হলফনামায় ‘স্নাতকোত্তর’ উল্লেখ করে জমা দিয়েছেন স্নাতক সনদ। এ মিথ্যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২(সি) এর লঙ্ঘন। তাই আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া রিট করেছেন। আদালত শুনানি নিয়ে ১৮ আগস্ট রুল জারি করেছিলেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক, শহিদ ইসলাম এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিট আবেদনে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাপুল প্রতারণা, জালিয়াতি করে শুধু অবৈধ সম্পদই অর্জন করেননি। তিনি জালিয়াতি করে ভুয়া শিক্ষাগত সনদও জোগাড় করেছেন। তিনি সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ অব এডুকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনমিক্স বিষয়ে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন। শিক্ষাবর্ষ ১৯৮৭।’
ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, পাপুল যে বিষয়ের ওপর স্নাতক সনদ জোগাড় করেছেন কলেজটিতে ওই বিষয়ের ওপর কোনো ডিপার্টমেন্ট নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাপুল ২০১৬ সালে কুয়েত থেকে নিজ এলাকা লক্ষ্মীপুরে ফিরে ‘লক্ষ্মীপুর২৪ডটকম’ নামে একটি অনলাইন পোর্টালে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এটি প্রকাশ করা হয় একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর।
সেখানে পাপুল দাবি করেন, ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন ১৯৯২ সালে। সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজের নামে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন ১৯৮৭ সালে।
১৯৯২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও এর আগে ১৯৮৭ সালে স্নাতক পাসের তথ্যের এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ হিসাব তাকে বিতর্কিত করেছে। নিউইয়র্ক সিটি কলেজে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন বলেও সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন তিনি।
গত বছরের ৬ জুন স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে শহীদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করেন। কুয়েত সিআইডি তার বিরুদ্ধে কুয়েতে মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগ এনেছে।
প্রসঙ্গত, অর্থপাচার ও মানবপাচারের মতো অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে গত ২৮ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন কুয়েতের আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাপুলকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার (প্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা) জরিমানাও করা হয়েছে।
দেশটির ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান এমপি পাপুলকে দোষী সাব্যস্ত করে এই রায় দেন।
নদী বন্দর / পিকে