জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের দশানী নদীতে দুই গ্রামের দেওয়া দুটি বাঁধ অবশেষে ভেঙে ফেলা হয়েছে। শুক্রবার (২ মে) স্থানীয় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে দেওয়ানগঞ্জের খরপাপাড়া ও পাশের বকশীগঞ্জের আইরমারী গ্রামে দশানী নদীতে নির্মিত বাঁধ দুটি ভেঙে ফেলা হয়।
বাঁধ ভেঙে দেওয়ার ফলে সৃষ্ট কৃত্রিম সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে বাঁধ ভাঙতে বাধা দেয়ায় ওই এলাকার দুইজনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- চর আইরমারী গ্রামের সোনার উদ্দিনের ছেলে রহমত আলী (৪০) ও মৃত হাসেন আলীর ছেলে ইউসুফ আলী (৩২)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের খাপরাপাড়া দশানী নদীতে প্রতি বছর তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। বারবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে দশানী নদীতে আড়াআড়িভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে নদীর পূর্ব দিক থেকে আগত পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী, শেখপাড়া, খানপাড়া, বাঙালপাড়া, মদনেরচর, নীলেরচর, কুতুবেরচর, চরগাজিরপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়।
অন্যদিকে বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চর আইরমারী গ্রামের বাসিন্দারাও একই নদীতে আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করেন। দুটি বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে উজানে কৃত্রিম বন্যা দেখা দেয়। বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি কৃত্রিম বন্যায় তলিয়ে যায়। পরে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধটি ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ১ মে বাঁধ ভাঙতে গেলে দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে দুইজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মধ্যমে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার সকালে বাঁধটি ভেঙে দিয়ে পানি বের করে দেওয়া হয়। এতে দুই এলাকার লোকজনের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।
কামালের বার্ত্তী গ্রামের আব্দুল হান্নান মন্ডল বলেন, প্রতি বছর এই নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। সরকার কোনো কাজ করে না। এজন্য এলাকার লোকজন নদীতে পাল্টাপাল্টি বাঁধ দিয়েছিল। এবার যদি ভাঙন এলাকায় কাজ করে তাহলে সমস্যা আর হবে না।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, বাঁধ নির্মাণের ফলে ওই এলাকায় কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়। পরে উভয় পক্ষের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা করে অবশেষে বাঁধ দুটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী ভাঙনকবলিত এলাকায় ভাঙন রোধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম বলেন, উভয় পক্ষকে ডেকে আলোচনা করে বাঁধ দুটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তাদের দাবি অনুযায়ী ভাঙন রোধে কাজ করা হবে।
নদীবন্দর/জেএস