1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
পাকিস্তান-বাংলাদেশ: বিরোধ ভুলে সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে - Nadibandar.com
মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
নদীবন্দর,ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ১ বার পঠিত

দীর্ঘদিনের ঠাণ্ডা সম্পর্কের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উষ্ণতা ফিরে আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, চুক্তি এবং আলোচনার মধ্য দিয়ে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষাপটে এই পরিবর্তনকে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডন এক সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করেছে—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে যেভাবে দুই দেশের সম্পর্ক ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এসে সেখানে ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলেছে।

সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ১৩ বছর পর প্রথমবারের মতো ঢাকা সফর করেছেন। তিনি বাংলাদেশে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান এবং দুই দেশের মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিগুলো বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতিসহ নানা খাতে সহযোগিতার নতুন দ্বার খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও এই সম্পর্ক আরও গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, অতীতের জটিলতা সত্ত্বেও ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া জরুরি।

তবে ১৯৭১ সালের ইতিহাস এখনো দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনায় বড় একটি বিষয় হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ এখনো পাকিস্তানের কাছ থেকে সেই সময়ের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান মনে করে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি এবং ২০০২ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের দুঃখপ্রকাশের মধ্য দিয়েই তারা এই অধ্যায়কে শেষ করেছে।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে ১৯৭১ সালের ঘটনাকে পাকিস্তানবিরোধী অবস্থান প্রতিষ্ঠার প্রধান ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনে সেই ধারাবাহিকতা খানিকটা ভেঙেছে।

বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে গড়ে ওঠা একক রাষ্ট্রীয় বর্ণনার বিরুদ্ধেও এখন কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তার ভাস্কর্য ভাংচুর, প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভাঙচুর, এমনকি টাকায় থাকা তার প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয় রাজনৈতিক আবহে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, অতীতে মুজিবকেন্দ্রিক রাষ্ট্রীয় প্রচারণা এবং বিরোধীদের দমন নীতির কারণে সমাজে একটি বিকল্প চেতনা দানা বেঁধেছে।

তবে এই বাস্তবতা সত্ত্বেও ইতিহাসকে অস্বীকার করা বা ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। বরং ১৯৭১ সালের ঘটনা একটি মর্মান্তিক ইতিহাস হিসেবে মেনে নিয়ে ভবিষ্যতের পথ তৈরিতে মনোযোগী হওয়াই যুক্তিসংগত।

এ প্রেক্ষাপটে আবারও সামনে এসেছে সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রসঙ্গ। যদিও ভারতের অনমনীয় অবস্থানের কারণে এ অঞ্চলের এই আঞ্চলিক সংগঠনটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, তথাপি আঞ্চলিক সহযোগিতার বিকল্প পথ খোঁজা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা কাঠামো হতে পারে একটি বাস্তব ও কার্যকর বিকল্প। এতে অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশও অংশ নিতে পারে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এক সময় একসঙ্গে একই রাষ্ট্র কাঠামোর অংশ ছিল। ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভাষাগত মিল দুই দেশকে ঘনিষ্ঠ করেছে। সেই পুরোনো সম্পর্ককে নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারলে আঞ্চলিক অগ্রগতি সম্ভব বলে মত বিশ্লেষকদের।

অতীত ভুলে নয়, বরং ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে এবং পরস্পরের অবস্থানকে স্বীকার করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে নতুন একটি বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে। পাকিস্তান থেকে যে সুর শোনা যাচ্ছে, তা কূটনৈতিক সৌহার্দ্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন অপেক্ষা ঢাকার পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ভূমিকাই নির্ধারণ করবে—এই সম্ভাবনা কেবল বার্তায় থাকবে, নাকি বাস্তবে রূপ নেবে।

সূত্র: দ্যা ডন

নদীবন্দর/এএস

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com