ফিলিস্তিনের গাজা ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়ছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর আবারও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান।
এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন ইসরায়েলের সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) ড. জ্যাক নেরিয়া।
তিনি জানিয়েছেন, ইরান সাম্প্রতিক হামলার প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশপাশি হিজবুল্লাহকেও যুদ্ধের জন্য সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খবর দ্য জেরুজালেম পোস্টর।
নেরিয়াহ রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা স্পষ্টতই আসন্ন সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত।
তিনি আরও বলেন, একটি যুদ্ধ আসছে বলে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। ইরান এই অপমান সহ্য করতে পারবে না, প্রতিশোধ নিশ্চিত। একই সঙ্গে নেরিয়াহ ইসরায়েল-সিরিয়ার সাম্প্রতিক আলোচনার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তার দাবি, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব আহমেদ আল-শারাহ হিজবুল্লাহর অস্ত্র চালান আটকাচ্ছে এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির পুনর্গঠন ঠেকাচ্ছে। এটি ইসরায়েলের প্রতি সদিচ্ছার প্রমাণ বলে তিনি মনে করেন।
নেরিয়াহ বলেন, ভিন্ন পরিস্থিতিতে এই আলোচনাই সিরিয়ার সংবাদমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হতো। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির কারণে আপাতত আমরা নিরাপত্তা চুক্তির দিকেই অগ্রসর হচ্ছি। এটি ইসরায়েল-সিরিয়ার পারস্পরিক স্বার্থের একটি বড় কৌশলগত পদক্ষেপ।
তিনি আরও জানান, আসাদ শাসনের পতনের পর হিজবুল্লাহর আঞ্চলিক প্রভাব ভেঙে পড়েছে এবং ইরান এখন আল-শারাহ সরকারকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তার মতে, সিরিয়া ইসরায়েল সীমান্তে স্থিতিশীলতা চায়, যা তেহরানের কৌশলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ইরানকে পরাধীন করার মার্কিন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় ফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
গত রোববার এই আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ইরান কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথানত করবে না। রাজধানী তেহরানের এক মসজিদে দেওয়া এই বক্তব্য পরে খামেনির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য হলো- ইরানকে নিজের ইচ্ছামতো চালানো এবং ওয়াশিংটনের ‘আনুগত্যে বাধ্য করা’।
শত্রুরা আক্রমণ করলে শক্ত হাতে কঠিন ও চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে- এমনটাই জানিয়েছে ইরানের সেনাবাহিনী। সোমবার এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, সেনাবাহিনী সবসময় সরকারের পাশে থাকবে এবং ইসলামি বিপ্লবের লক্ষ্য পূরণে কাজ করবে।
সর্বোচ্চ নেতা আয়তুল্লাহ আলী খামেনেরি প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেনাবাহিনী বলেন, তার দিকনির্দেশনা মেনে সেনারা দেশের নিরাপত্তা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও মূল্যবোধ রক্ষায় প্রতিরক্ষা শক্তি আরও বাড়াবে।
এছাড়া, পারমানবিক বিষয়ে আলোচনা করতে ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে বসতে যাচ্ছে ইরান। মঙ্গলবার জেনেভায় এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি এ বৈঠকে ভূমিকা পালন করবে।
এটি হবে ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধ (গত জুনে) শেষে দ্বিতীয় বৈঠক। প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৫ জুলাই ইস্তাম্বুলে।
জুনের যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, আর ইরানও ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালায়।
নদীবন্দর/এএস