1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
জেনে নিন কিভাবে একটি ক্রিকেটে পিচ তৈরি করা হয়! - Nadibandar.com
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১
  • ১২৬ বার পঠিত

ভারত-ইংল্যান্ড প্রথম টেস্টে চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে যেভাবে ধুলাবালি উড়তে শুরু করে, তখন একে ‘সমূদ্র সৈকতে’র সঙ্গে তুলনা শুরু হয়ে যায়। যদিও এই টেস্টে ২২৭ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় টেস্টের উইকেটের অবস্থা আরও খারাপ। এবার আরও করুণ হার পরাজিত দলের। তবে, এবার পরাজিত দল ইংল্যান্ড। একদিনেরও বেশি সময় হাতে রেখে ৩১৭ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছিল ভারত।

ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন- চিপকের উইকেটকে সরাসরি তুলনা করেন সমূদ্র সৈকতের বালুকাবেলার সঙ্গে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূল থেকে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট চলে আসে উত্তরাঞ্চলের শহর আহমেদাবাদে। ততক্ষণে সিরিজে সমতা বিরাজ করছিল। পরের ম্যাচ দিবা-রাত্রির, গোলাপি বলে।

ভেন্যু? সবরমতি নদী থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দুরে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ আহমেদাবাদের মোতেরা স্টেডিয়ামে। সংস্কারের পর প্রথম ম্যাচ মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায়। ১ লাখ ১০ হাজার দর্শক ধারণ করতে পারে স্টেডিয়ামটি। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছে অর্ধেক দর্শকের, তথা ৫৫ হাজার।

প্রকৃতি এবং মাটির রঙ এখানে পরিবর্তন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে বলের রঙও পরিবর্তন। লাল থেকে গোলাপি। কিন্তু ইংল্যান্ডের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। বরং, আরও করুণ হয়েছে।

দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচটি শেষ হয়েছে দু’দিনেরও কম সময়ে, মাত্র দেড়দিনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এক ছোট টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেট আর কখনও দেখেনি। পুরো টেস্টে পূর্ণাঙ্গ চারটি ইনিংস খেলা হলো। দুই দল মিলে খেলেছে কেবল ৮৪২টি বল।

এই ম্যাচের পর টেস্টের ফলাফল নিয়ে আরেকটি বিতর্ক তৈরি হয়। যে টেস্টের উইকেটে প্রতিটি বলেই পিচ ভাঙতে শুরু করে, সেটা আবার কেমন পিচ? টেস্ট ক্রিকেটে এমন পিচ হয় নাকি? মাইকেল ভন তো রীতিমত নিজের উঠোনকে খুঁড়ে, চাষের জমি বানিয়ে ক্রিকেট পিচ তৈরির একটা ব্যাঙ্গাত্মক ছবি প্রকাশ করেছেন। ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘চতুর্থ টেস্টের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে…।’

এরপরই প্রশ্ন তৈরি হয়ে যায়, আসলে ক্রিকেট পিচ তৈরি হয় কিভাবে? কী কী উপাদান থাকে এতে? ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট, তিন ফরম্যাটের উইকেট কী একইরকম হয়? এমন প্রশ্নগুলোর সমন্বয়ে উত্তর তৈরি করেছে ভারতের বিখ্যাত সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মোতেরার পিচ নিয়ে যখন বিতর্ক চলছেই, তখন এক অনলাইন প্রেস কনফারেন্সে রবিচন্দ্রন অশ্বিন উল্টো প্রশ্ন রাখেন, ‘আদর্শ পিচ আসলে কোনটি?’ অশ্বিনের এই মন্তব্যের পরদিনই তাকে সমর্থন করে কথা বলেছেন ক্যারিবীয় গ্রেট স্যর ভিভ রিচার্ডস। তিনি ইংলিশদের পিচ নিয়ে কান্নাকাটি বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

সেই মোতেরায় আবারও গড়াতে যাচ্ছে টেস্ট ম্যাচ। ভারত-ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ এবং শেষ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে এই মাঠেই। তার একদিন আগেই পিচ কিভাবে তৈরি হয়, তার একটা বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

পিচ যারা তৈরি করে তাদেরকে ক্রিকেটের ভাষায় বলা হয় কিউরেটর। এমন কিছু কিউরেটরের সঙ্গে কথা বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ক্রিকেট পিচ তৈরিতে নজর রাখতে হয় মৃত্তিকা বিজ্ঞান, জলবায়ুর প্রভাব, বল, ফরম্যাট, মনোভাব, উদ্দেশ্যসহ নানা দিক।

আরও গভীরে জানতে গিয়ে উঠে এসেছে ক্রিকেপ পিচ তৈরির বৈজ্ঞানিক পন্থা সম্পর্কে। টাইমস অব ইন্ডিয়া কথা বলেছেন মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কিউরেটর সামান্দার সিং চৌহানের সঙ্গে। তার কথার আলোকেই সাজানো হয়েছে পিচ তৈরি করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে।

jagonews24

প্রথমেই ফরম্যাট

চৌহান বলেন, একজন কিউরেটরের সবার আগে মাথায় থাকে, কোন ফরম্যাটের জন্য পিচটি তৈরি করতে যাচ্ছেন। এটা কী টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে নাকি বেশ কয়েকদিনের ম্যাচ (যেমন ঘরোয়ায় চারদিনের প্রথম শ্রেণির ম্যাচ কিংবা পাঁচ দিনের টেস্ট)? এরপর আমরা চিন্তা করি, এখানে কারা খেলবে?

সীমিত ওভার ক্রিকেটে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে পিচ তৈরি হয় ব্যাটসম্যানদের কথা মাথায় রেখেই। এখানে অনেক বেশি চার এবং ছক্কা হতে হয়। যে কারণে ওয়ানডে’র মত ফরম্যাটে একজন ব্যাটসম্যান ডাবল সেঞ্চুরিও করে ফেলে এবং এটা এখন আর অবাক করার মত বিষয়ও নয়। কিন্তু যখন ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কিংবা টেস্ট ম্যাচের উইকেট তৈরি করার প্রশ্ন আসে, তখন এই ফরম্যাট দাবি রাখে আরও বেশি প্রতিযোগিতার। এ কারণেই হয়তো, ইংল্যান্ডের কিছু বিশেষজ্ঞ চলমান সিরিজ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়েছেন।

চৌহান বলেন, ‘আমরা ফরম্যাচের চাহিদা অনুসারে মাঠ তৈরি করি। যদি এটা টি-টোয়েন্টি হয়, তাহলে কেউই চাইবে না, সেটা বোলারদের জন্য তৈরি করতে। টি-টোয়েন্টিতে কেউই চায় না কোনো বোলার ৫ উইকেট নিক, যাতে ম্যাচটা লো স্কোরিং হয়ে যায়। সমর্থকরা চায় গুড ব্যাটিং উইকেট। কারণ, সমর্থকরা চায় অনেক বেশি বাউন্ডারি এবং ছক্কা হোক, তাহলে তারা আনন্দ-উল্লাস করতে পারে।’

পিচ তৈরি হয় কিভাবে? প্রক্রিয়া কী?
ক্রিকেট পিচ তৈরি করা খুবই কষ্টসাধ্য একটি কাজ। একটি ভালো ট্র্যাক তৈরি করতে অনেক বিজ্ঞান এবং অনেক শ্রম দিতে হয়। কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার, নির্বাচক, ম্যানেজার ও প্রশাসক পলি উমরিগড়, যিনি ৫৯টি টেস্ট ম্যাচও খেলেছেন, পিচ প্রস্ততকরণের একটি পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি বলেন, ‘পিচের জায়গায় তিন ফুট মাটি খুঁড়ে এরপর মাটি, বালি, ঘাস দিয়ে মোট ৫টি স্তর তৈরি করতে হয়। প্রতিদিন পানি দেয়া এবং রোলিং করতে হয়। এই পদ্ধতি বেশিরভাগ কিউরেটরই অনুসরণ করে থাকেন।

কে সিদ্ধান্ত দেন, পিচ হবে কেমন?
ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করছেন, ভারত তাদের শক্তি অনুসারেই উইকেট তৈরি করেছে। যদিও প্রতিটি দেশই হোম অ্যাডভান্টেজ নিয়ে থাকেন। যে কারণে প্রতিটি স্বাগতিক দেশের বোর্ডই উইকেট কেমন হবে সে সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়ে থাকেন কিউরেটরদের। এমনকি স্বাগতিক দলের অধিনায়কও এ সম্পর্কে মতামত দিতে পারেন।

সামান্দার সিং চৌহান বলেন, ‘কিউরেটরই সিদ্ধান্ত নেন কেমন পিচ তৈরি করা হবে। তবে ওপরের অংশ কেমন হবে (সবুজ, ধূসর বা ন্যাড়া), সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন তিনি ম্যাচের ফরম্যাট অনুসারে। স্বাগতিক অধিনায়ক কিউরেটরকে নিজের মতামত দিতে পারেন, তবে কোনো নির্দেশনা নয়। এরপর কিউরেটর বৈঠক করেন স্বাগতিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এরপর বিসিসিআইয়ের গাইডলাইন অনুসারে কিউরেটর সর্বশেষ প্রক্রিয়া শেষ করেন। ’

চৌহান আরও বলেন, ‘একজন কিউরেটর হিসেবে আমি আমার দলের শক্তির দিকটি বিবেচনায় রাখি। আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ায় যান, ওরা আপনাকে টেস্টে ৮ থেকে ১০ মিলিমিটার লম্বা ঘাস দেবে। ওয়ানডেতে ফাস্ট বোলারদের সুবিধা দিতে ৬ মিলিমিটারের ঘাস রাখে।’

পিচ তৈরিতে মৃত্তিকাবিজ্ঞান
বিশ্বের প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে মাটি বা মৃত্তিকা। তবে পৃথিবীর কোন অঞ্চলের মাটি কেমন হবে? সেটা খুবই জটিল একটি বিষয়। এ জিনিসটা নির্ভর করে প্রতিটি অঞ্চলের জলবায়ুর ওপর।

তবে ক্রিকেট পিচ যেহেতু তৈরি করা হয়, এখানে অনেক সময় লাল মাটি, কিংবা কালো মাটি দেখা যায়। চৌহান জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কোনো এলাকার মাটির সঙ্গে ক্রিকেট পিচের মাটির রঙ মিল নাও থাকতে পারে। মাটির রঙ পিচকে বদলে দিতে পারে না। এটাকে তৈরি করা হয় এবং এখানে মাটির মিশ্রনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। পিচ তৈরিতে কতটুকু মাটি থাকবে, কতটুকু বালু থাকবে, এগুলোর মিশ্রন তথা যৌগিক প্রক্রিয়া কী হবে- তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

চৌহান বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, ‘একটি ভালো পিচের জন্য ৫০ ভাগের বেশি মাটি এবং ৫ ভাগের কম বালি প্রয়োজন হয়। আর খুব ভালোমানের বালি হলে সেটা হতে পারে ২০ ভাগেরও কম। যদি ২০ ভাগের কম বালু থাকে, তাহলে সেখানে এসিডিক /পানি (pH Value) হবে ৩৬০ থেকে ৭৩০ এর মধ্যে। এটা দিয়েই তৈরি হয় খুব ভালোমানের উইকেট। তবে আমরা চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন উপাদান বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে দিই।

চৌহান আরও বলেন, ‘ক্রিকেট পিচের রঙ নিয়ে অনেক কথা হয়। তবে কালো না লাল- এটা দিয়ে পিচের মান নির্ধারণ হয় না। পিচ কেমন তা নির্ধারণ করা হয় তার চরিত্র দিয়ে। কালো পিচ অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়। কারণ, এর মধ্যে ইলাস্টিসিটি থাকে। লাল মাটির চেয়ে এটা বেশিদিন টেকে। লাল মাটিতে ইলাস্টিসিটি কম, এ কারণে টেকেও কম। পার্থক্য শুধু এটুকুই।’

সারাবিশ্বে তিন ধরনের মাটি পাওয়া যায়। লাইট সয়েল, কাওলিনাইট সয়েল আর স্মেকটাইট সয়েল। চৌহান জানান, ‘তিন ধরনের মাটির মধ্যে কোনটি সবার সেরা, ‘অস্ট্রেলিয়ায় স্মেকটাইট সয়েল আছে। ওটাই পিচের জন্য সেরা মাটি। ওরা সাধারণত কালো মাটি ব্যবহার করে। কিন্তু ভারতের কালো মাটির পিচের চেয়ে বাউন্স, পেস বেশি পাওয়া যায়।’

নদী বন্দর / পিকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com