মিয়ানমারের সামরিক সরকারের হাত থেকে পালিয়ে অবৈধপথে কেউ যেন ভারতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা টহল জোরদার করেছে তারা। এক ভারতীয় কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্য মিজোরামের চাম্পাই জেলার জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা মারিয়া জুয়ালি বলেছেন, এখন পর্যন্ত আমরা কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। সীমান্তের সম্মুখভাবে ভারতীয় সেনা ও পুলিশ বাহিনী টহল দিচ্ছে।
অবশ্য মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বেশ কিছু মানুষ ইতোমধ্যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ১৯ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন, যারা জান্তা সরকারের আদেশ মানতে রাজি না হওয়ায় দেশত্যাগ করেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই সেনাশাসনের বিরোধিতায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের জনগণ। বিক্ষোভ দমনে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দেশটির জান্তা সরকারও।
সেখানে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে এপর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। এ কারণে সেনাশাসকদের নির্দেশ অমান্য করে অনেকেই মিয়ানমার থেকে পালাতে চাচ্ছেন, বিশেষ করে দেশটির পুলিশ সদস্যরা।
মিজোরামের আরেক জেলা সারচিপের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা কুমার অভিষেক জানান, সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে এক নারী ও এক শিশুসহ আটজন ভারতে প্রবেশ করেছেন। আরও বহু মানুষ তাদের পথ অনুসরণ করতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
মিজোরামের এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে মিয়ানমার পুলিশ ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলে অন্তত ৩০ জন ভারতে প্রবেশ করেছেন। এই আলাপের আগের রাতেও কিছু লোক ঢুকেছে বলে জানান তিনি।
ভারতের ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তে ভারতীয় সেনাদের জোর টহল সত্ত্বেও মিয়ানমারের লোকজন ঢুকে পড়েছে। তারা বিভিন্ন রুট দিয়ে আসছে। সীমান্ত ছিদ্রযুক্ত। সুতরাং, আপনি এটা আটকাতে পারবেন না।
মিয়ানমার থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ঢল নামা, বিশেষ করে পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে আসায় দোটানায় পড়েছে ভারত সরকার। কারণ, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা তাতমাদাওয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে নয়া দিল্লির।
ভারতের অনুরোধে গত দুই বছর উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে বিদ্রোহী দমনে বহুবার অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। জবাবে, গত বছর বার্মিজদের প্রথম সাবমেরিন উপহার দিয়েছে ভারত।
ভারতীয় ওই কর্মকর্তার মতে, এই মুহূর্তে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে ভারত।
নদী বন্দর / জিকে