চীন গাওয়াদার সমুদ্রবন্দরে লেজ গাড়লে অবরুদ্ধ বেলুচিস্তানের কী হতে পারে?
ভালো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি আরেকটি উইঘুর হতে যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ডা. আরিফ আলভি বন্দরটি পরিদর্শণে গিয়ে বলেন, ‘গাওয়াদার বন্দর উন্নয়ণের ফলে বেলুচিস্তান এবং পাকিস্তানের অর্থনীতিও বেগবান হচ্ছে। এ ছাড়া এ বন্দরের উন্নয়ণ শেষ হলে এটি হবে স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তান, তাজিকিস্তানের কাছাকাছি সমুদ্র বন্দর। যেহেতু তাদের নিজস্ব কোনো বন্দর নেই, তাই এ বন্দর ব্যবহার করায় বেলুচিস্তান ও পাকিস্তান আরও বেশি উপকৃত হবে।’
বন্দরটির উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রশংসা করেছে চীনের সংবাদমাধ্যম চায়না ইকোনোমিক নেট। বন্দর উন্নয়নের গুরুত্ব ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টার কমতি রাখেনি এ সংবাদমাধ্যমটি। এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘চীন কর্তৃক পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে অবস্থিত গাওয়াদার সমুদ্রবন্দরটির উন্নয়ন প্রকল্পটি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। এর সুফল ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছে প্রদেশটি।’
বাস্তবে অবরুদ্ধ বেলুচিস্তানের জন্য এটি হবে-মরার ওপর খাড়ার ঘাঁয়ের মতোই। কারণ এমনিতেই তারা বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছিল। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা পাকিস্তানের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। চীন-পাকিস্তান যৌথ উপস্থিতি বন্দরে থাকলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সহজ হবে, তাই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এ পদক্ষেপের ফলে বেলুচদের ন্যায্য অধিকার নষ্ট হবে।
পাকিস্তানে চীনের বিনোয়োগ-ই কী মূল লক্ষবস্তু?
হ্যাঁ। এটার অন্য দশটা দিক থাকলেও মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক। সম্প্রতি চায়না ইকোনোমিক নেট‘র এক প্রতিবেদন ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজ পাকিস্তান (আইএনপি) নামের এক সংবাদমাধ্যমে কোট-আনকোট করে প্রকাশ করা হয়। যেখানে পাকিস্তানে চীনের বিপুল বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী- করোনা মহামারির প্রথম সাত মাসে ইসলামাবাদকে ৪০২.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে বেইজিং।বিপরীতে বেইজিং তাদের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে ইমরান সরকারের পাকিস্তান। মূল কথা হলো পাকিস্তানের প্রয়োজন টাকা, আর চীনের প্রয়োজন আঞ্চলিক আধিপত্য। মাঝখানে চাপা পড়ল অসহায় বেলুচরা।
সে লক্ষ্যে চীনের কোম্পানিগুলোকে রক্ষার জন্য গওয়াদার বন্দরের ২৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করছে পাকিস্তান সরকার। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) ‘মুকুট মণি হিসেবে এই স্থানকে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান।
কাঁটাতারের বেড়াকে স্থানীয়রা কীভাবে নিচ্ছে?
স্বাভাবিকভাবেই তারা বিষয়টিকে ইতিবাচ দৃষ্টিতে দেখছে না। কারণ এটি বিদেশি বিনিয়োগ বা বন্দর নির্মাণের জন্য কাঁটা তারের বেড়া নয়, এর পেছনের উদ্দেশ্য ভিন্ন। কিন্তু চীন-পাকিস্তান প্রপাগান্ডা থেমে নেই। তারা বোঝানোর চেষ্টা করছে, উইঘুরে তাদের মুসলিম ভাইদের সাথে খারাপ কিছু করা হয়নি। তাদের যুগপযোগী শিক্ষার জন্যই আলাদা ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর বেলুচদের জন্য ভালো কিছু করা হবে, তারা যেন চীনের ওপর আস্থা রাখে।
সেখানকার বর্তমান অবস্থা কী?
সেখানে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, মাক্রান প্রশাসন, গোয়াদার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গোয়াদার বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বেলুচিস্তান সরকার ‘গওয়াদার বন্দর স্মার্ট পোর্ট সিটি মাস্টার প্ল্যানের’ আওতায় কাঁটা তারের বেড়া দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই গোয়াদার বন্দরের চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করা হবে। বন্দরটিতে মাত্র তিনিটি প্রবেশ পথ থাকবে এবং প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির আওতায় থাকবে ।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বেলুচদের অবস্থান কী?
বেলুচিস্তানের জনগণ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি সময়ে বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হুমকিতে চীনের কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়েছে। আর এ জন্যই আলাদা একটি শহর গড়ে তুলে চীনের কোম্পানিগুলোকে রক্ষা করতে চাইছে পাকিস্তান। এ বিষয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টির সিনেটর মিয়া রাজা রাব্বানি বলেন, এই বেড়া দেওয়ার ফলে ফেডারেল সরকার বন্দর শহরকে দুই ভাগে বিভকক্ত করে ফেলছে। এর ফলে সেখানে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
নদী বন্দর / পিকে